FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

Premer Kobita (প্রেমের কবিতা)

Premer Kobita (প্রেমের কবিতা)

*

Premer Kobita (প্রেমের কবিতা)

বিবাহিতাকে

জয় গোস্বামী

কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাড়ালেই আমি

তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই।

ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে।

অনেকদিন ধ’রে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে

এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার

কীট-বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এরপচন নেই।

বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না।

রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে।

আমি জানি, মৃতদেহটা আমার।

কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন।

আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরেগিয়ে

পা কামড়ে ধ’রে, ওটাকে, ঝোপ থেকে

টেনে বার করব আমি।

---------------------------------

কথা আছে

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বহুক্ষণ মুখোমুখি চুপচাপ, একবার চোখ তুলে সেতু

আবার আলাদা দৃষ্টি, টেবিলে রয়েছে শুয়ে

পুরোনো পত্রিকা

প্যান্টের নিচে চটি, ওপাশে শাড়ির পাড়ে

দুটি পা-ই ঢাকা

এপাশে বোতাম খোলা বুক, একদিন না-কামানো দাড়ি

ওপাশে এলো খোঁপা, ব্লাউজের নীচে কিছু

মসৃণ নগ্নতা

বাইরে পায়ের শব্দ, দূরে কাছে কারা যায়

কারা ফিরে আসে

বাতাস আসেনি আজ, রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে।

আপাতত প্রকৃতির অনুকারী ওরা দুই মানুষ-মানুষী

দু‘খানি চেয়ারে স্তব্ধ, একজন জ্বলে সিগারেট

অন্যজন ঠোঁটে থেকে হাসিটুকু মুছেও মোছে না

আঙুলে চিকচিকে আংটি, চুলের কিনারে একটু ঘুম

ফের চোখ তুলে কিছু স্তব্ধতার বিনিময়,

সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে

অথচ সময়ই জানে, কথা আছে, ঢের কথা আছে।

---------------------------------

হঠাৎ দেখা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,

ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন।

আগে ওকে বারবার দেখেছি

লালরঙের শাড়িতে

দালিম ফুলের মতো রাঙা;

আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,

আঁচল তুলেছে মাথায়

দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে।

মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব

ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,

যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায়

শালবনের নীলাঞ্জনে।

থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা;

চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।

হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে

আমাকে করলে নমস্কার।

সমাজবিধির পথ গেল খুলে,

আলাপ করলেম শুরু —

কেমন আছ, কেমন চলছে সংসার

ইত্যাদি।

সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে

যেন কাছের দিনের ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।

দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,

কোনোটা বা দিলেই না।

বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় —

কেন এ-সব কথা,

এর চেয়ে অনেক ভালো চুপ করে থাকা।

আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে

ওর সাথিদের সঙ্গে।

এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।

মনে হল কম সাহস নয়;

বসলুম ওর এক-বেঞ্চিতে।

গাড়ির আওয়াজের আড়ালে

বললে মৃদুস্বরে,

“কিছু মনে কোরো না,

সময় কোথা সময় নষ্ট করবার।

আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;

দূরে যাবে তুমি,

দেখা হবে না আর কোনোদিনই।

তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,

শুনব তোমার মুখে।

সত্য করে বলবে তো?

আমি বললেম, “বলব।”

বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,

“আমাদের গেছে যে দিন

একেবারেই কি গেছে,

কিছুই কি নেই বাকি।”

একটুকু রইলেম চুপ করে;

তারপর বললেম,

“রাতের সব তারাই আছে

দিনের আলোর গভীরে।”

খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম না কি।

ও বললে, “থাক্‌, এখন যাও ও দিকে।”

সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে;

আমি চললেম একা।

---------------------------------

*




0 Comments 217 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024