FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

আজকের তারাবীহ | পর্ব - ২৬

আজকের তারাবীহ | পর্ব - ২৬

*

আজকের তারাবীহ | পর্ব-২৬

পবিত্র মাহে রামাদানের প্রতিদিনের খতম তারাবীহ সালাতে তেলাওয়াতকৃত আয়াত সমূহের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ ও আলোচনা নিয়ে এই আয়োজন।
#আজকের_তারাবীহ
#রামাদান_২৬
সূরা মুলক, আয়াত ১ থেকে ৩০
সূরা মুলকে বলা হয় আল্লাহ মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন মানুষের নেক আমলের পরীক্ষা নিতে। তিনি নিখুঁতভাবে আসমান সৃষ্টি করেছেন। তাঁরই সৃষ্ট জাহান্নাম ও জান্নাতে এর অধিবাসীরা কী অবস্থায় থাকবে তা বর্ণিত হয়। তিনি শুধু স্রষ্টাই নন, গোপন-প্রকাশ্য সবকিছুর ব্যাপারে জ্ঞানীও। তিনিই পশুপাখিকে আমাদের বশ করে দিয়েছেন যাতে আমরা এ থেকে উপকৃত হই। দিয়েছেন শ্রবণ, দর্শন ও চিন্তাশক্তি। তিনি যদি এসব রিযক বন্ধ করে দেন বা ভূগর্ভস্থ পানি আমাদের নাগালের বাইরে নামিয়ে দেন, তাহলে কে আছে যে তা পুনরায় এনে দিবে? তিনিই যদি আচমকা আযাব দেন, তা ঠেকানোর কেউ নেই। রাসূল (সাঃ) মুমিনরা যদি মরেই যায়, তাহলেও কাফিরদের যে পাওনা আযাব- তা কি কেউ ঠেকাতে পারবে? যে দ্বীনের পথে চলে সে সোজা হয়ে চলা ব্যক্তির মতো, আর বেদ্বীনরা মুখে ভর দিয়ে চলা ব্যক্তির মতো। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাবে দ্বীনদার ব্যক্তিই।
সূরা ক্বলাম, আয়াত ১ থেকে ৫২
রাসূলকে (সাঃ) উন্মাদ বলে কাফিররা যে অপবাদ দিতো, সূরা ক্বলামে তা খণ্ডন করে বলা হয় রাসূল (সাঃ) চরিত্রের সর্বোচ্চ স্তরে আছেন। তাঁর বিরোধিতাকারী কাফিররাই তো বরং নিন্দুক, চোগলখোর, কৃপণ এরকম মন্দ চরিত্রের। শেষবিচারের অস্তিত্ব না থাকা মানে ভালো-খারাপ সবার পরিণতি একই মৃত্যু।
একদল লোকের উপমা দেওয়া হয় যারা নিজেদের শস্যক্ষেত্র নিয়ে বড়াই করতো। যেদিন ফসল কাটতে আসলো তার আগের রাতে এক উপদ্রব হানা দিয়ে ফসল ধ্বংস করে দেয়। তারা দেখে ভাবে ভুলপথে চলে এসেছে। পরে নিজেদের অহংকারের কথা স্মরণ করে তাওবাহ করে।
কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাঁর পায়ের গোছা (যেমন 'পা' তাঁর শানের উপযোগী, সেরকম পা। এর আকৃতি-প্রকৃতি আমাদের অজানা) উন্মুক্ত করবেন। খাঁটি মুমিনরা সেজদায় লুটিয়ে পড়বে। আর যারা লোক দেখাতে সালাত পড়তো, তাদের পিঠ শক্ত হয়ে থাকবে, সেজদা করতে না পেরে অপমানিত হবে।
ইউনুস (আঃ) যেভাবে আল্লাহর হুকুম আসার আগেই কওমকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, রাসূলকে (সাঃ) তেমনটা করতে মানা করা হয়।
সূরা আল-হাক্বক্বাহ, আয়াত ১ থেকে ৫২
সূরা আল-হাক্বক্বাহ'তে কিয়ামাতকে এক অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার বলা হয়েছে, যা আদ, সামুদ, কওমে লূত, ফিরআউন ও কওমে নূহ অস্বীকার করে আযাবে পাকড়াও হয়। কিয়ামাত দিবসের ভয়াবহ বর্ণনা দেওয়া হয়। যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে সে খুশিতে সবাইকে তা দেখাবে। আর যার আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে, সে আফসোস করবে মৃত্যুই যদি শেষ পরিণাম হতো! সে দুনিয়ায় দানসদকা করতো না, আজ জাহান্নামে তার খাদ্য হবে পুঁজের মতো পানি গিসলীন। কুরআন কোনো কবি বা জ্যোতিষীর বাণী নয়। রাসূল (সাঃ) যদি নিজে বানিয়ে এসব কথা আল্লাহর নামে চালাতেন, তাহলে আল্লাহই তাকে শাস্তি দিতেন।
সূরা মাআরিজ, আয়াত ১ থেকে ৪৪
কাফিররা যে প্রতিশ্রুত আযাব নিয়ে আসতে বলে টিটকারি দিতো, তার জবাব দিয়ে সূরা মাআরিজ শুরু হয়। তারা ভাবছে এটা অসম্ভব, অথচ আল্লাহর সময়ের হিসেবে এটি নিকটে। সেদিন আসমান জমিনের চেহারাই পাল্টে যাবে। পাপাচারী, কৃপণ মানুষেরা নিজের বন্ধু, স্ত্রী, পুত্র, খান্দান সবকিছু মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে হলেও নিজে বাঁচতে চাইবে। কিন্তু যারা নামাযি, যাকাত-সদকা দাতা, আখিরাত বিশ্বাসী, ব্যভিচার করে না, আমানত রক্ষাকারী, সত্যবাদী- তারা নিরাপদ থাকবে।
সূরা নূহ, আয়াত ১ থেকে ২৮
নূহ (আঃ) এর দাওয়াতি কার্যক্রমের কথা এসেছে সূরা নুহ-এ। তিনি তাঁর কওমকে দিনেরাতে, প্রকাশ্যে-গোপনে, সবরকমে তাওহীদের দাওয়াত দেন। আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করলে তিনি দুনিয়াবি সম্পদও বাড়িয়ে দিবেন। তিনি মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করে আবার তাতেই ফিরিয়ে নিবেন। অবশেষে তাদের মাঝে যখন ঈমান আনার মতো আর কেউ বাকি থাকলো না, নূহ (আঃ) ঈমানদারদের নাজাত ও কাফিরদের ধ্বংস কামনা করে দুআ করলেন।
সূরা জিন, আয়াত ১ থেকে ২৮
রাসূলের (সাঃ) নিকট কুরআন শুনে জিনদের একটি দল ঈমান এনে নিজ জাতির নিকট গিয়ে কীভাবে ঈমানের দাওয়াত দেয়, তা বর্ণিত হয়েছে সূরা জিন এ। এ পর্যন্ত তাদের মাঝেও আল্লাহ সম্পর্কে অনেক শির্কি বিশ্বাস ছিলো। তারা ভেবেছিলো এত মানুষ আর জিন যেহেতু এগুলো বিশ্বাস করছে, এগুলো সত্যিই হবে হয়তো। এছাড়া আরবরা বনজঙ্গলে গেলে সেখানকার জিনদের কাছে আশ্রয় চাইতো। এতে জিনেরা আরো অহংকারী হয়ে উঠেছিলো। দুষ্ট জিনদের থেকে ওয়াহীকে রক্ষা করতে আসমানের দ্বারগুলোতে প্রহরা বসতে দেখেই তারা ধারণা করেছিলো কিছু একটা ঘটতে চলেছে। এভাবে অনেক জিন মুসলিম হলো। এ ঘটনার দৃষ্টান্ত দিয়ে মক্কার মুশরিকদেরও ঈমান আনতে বলা হয়। তাহলে তাদের দুনিয়াবি অভাবও মিটিয়ে দেওয়া হবে।
সূরা মুযযাম্মিল, আয়াত ১ থেকে ২০
নবুওয়ত প্রাপ্তির পর চরম মানসিক চাপে রাসূল (সাঃ) চাদর আবৃত করে শুয়ে ছিলেন। সূরা মুযযাম্মিলে তাঁকে প্রীতিভরে ডেকে তুলে তাহাজ্জুদ পড়তে বলা হয়। এর সময় ও ফজিলত বলে দেওয়া হয়। কাফিররা আখিরাতে কী পরিণাম ভোগ করবে তা বলা হয় এবং ফিরআউনের অবাধ্যতা ও পরিণামের দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়। সূরার শেষে সফর, যুদ্ধ ইত্যাদি পরিস্থিতি উল্লেখ করে তাহাজ্জুদের বিধান শিথিল করে সহজতা দান করা হয়। সালাত, যাকাত ও সদকা করতে উৎসাহ দেওয়া হয়।
সূরা মুদ্দাস্সির, আয়াত ১ থেকে ৫৬
সূরা মুদ্দাস্সিরের শুরুতে বলা হয় মানুষকে আখিরাত সম্পর্কে সতর্ক করতে, আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা করতে, শারীরিক সহ সবরকম পবিত্রতা গ্রহণ করতে, উপহার দিয়ে বিনিময় পাওয়ার লোভ না রাখতে।
কাফিররা কুরআনকে কবিতা, জ্যোতিষীর কথা ইত্যাদি কিছু বলেই সন্তুষ্ট হতে পারছিলো না। কারণ অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন তা তারা বুঝতে পারছিলো। ধনকুবের ওয়ালীদ বিন মুগীরা অনেক ভাবনাচিন্তা করে বলে কুরআনকে যাদুকরের কথা বলে আখ্যা দিতে। তাকে এ সূরায় রূঢ় তিরস্কার করে আখিরাতের ভয়ংকর পরিণতি জানানো হয়।
জাহান্নামে মাত্র ১৯ জন প্রহরী আছে শুনে কাফিররা ঠাট্টা করে। জানিয়ে দেওয়া হয় এরা ১৯ জন শক্তিশালী ফেরেশতা, তাই শক্তিতে পরাস্ত করা যাবে ভেবে খুশি হওয়ার কিছু নেই। এছাড়া আহলে কিতাবদের কিতাবেও এ সংখ্যাটির ইঙ্গিত আছে, ফলে তারা বুঝতে পারবে এটি আল্লাহরই বাণী।
জান্নাতিরা জাহান্নামিদের ডেকে জানতে চাইবে কীসে তাদের আগুনে নিয়ে আসলো। তারা বলবে তারা বেনামাজি ছিলো, মিসকীনদের খাবার দিতো না, অসার কথাবার্তা বলতো এবং আখিরাতে অবিশ্বাসী ছিলো। আল্লাহর বাণী থেকে এরা এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয় যেভাবে সিংহ থেকে বন্য গাধা পালায়।
সূরা ক্বিয়ামাহ, আয়াত ১ থেকে ৪০
সূরা ক্বিয়ামাহ-তে কিয়ামাত এবং নফসে লাওয়ামার কসম করে বলা হয়েছে কিয়ামাত সত্য। এর কয়েকটি আলামত বলা হয়েছে। মানুষকে আল্লাহ এক বিন্দু শুক্র থেকে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ বানান। তিনিই চাইলে আখিরাতে এদের আঙুলের ডগাসহ একইরকমভাবে পুনঃসৃষ্টি করতে পারেন। সেদিন মানুষকে তার কৃতকর্ম দেখানো হবে। বরং নিজের পাওনা কি জান্নাত না জাহান্নাম, তা নিজেই ভালো বুঝতে পারবে।
রাসূল (সাঃ) কুরআন মুখস্থ করার জন্য যেন ব্যস্ত না হন, সে কথা বলা হয়েছে। কুরআন সংরক্ষণ করানো ও ব্যাখ্যা জানানো আল্লাহরই দায়িত্ব।
সূরা দাহর, আয়াত ১ থেকে ৩১
সূরা দাহর-এ (আরেক নাম সূরা ইনসান) মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, সে একসময় বলার মতো কোনো কিছুই ছিলো না। ক্রমে বীর্য থেকে সে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়েছে।
জান্নাতিদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য ও প্রাপ্য বর্ণিত হয়েছে। তারা ওয়াদা পূর্ণ করে, কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মিসকীন, ইয়াতীম ও কয়েদীদের খাবার খাওয়ায়। তারা জান্নাতে পাবে রেশমি কাপড়, আরামদায়ক নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, হেলান দেওয়ার সুউচ্চ বসার জায়গা, আয়ত্তাধীন ফল, রূপা ও স্ফটিকের পানপাত্র, আদা মেশানো এক জাতের পানীয়, সালসাবীল নামক এক প্রস্রবণ, চিরকিশোর খাদেম, রূপার কাঁকন।
কাফিরদের পক্ষ হতে আসা বিরোধিতাকে পাত্তা না দিয়ে তাসবীহ পাঠ, তাহাজ্জুদ আদায় ইত্যাদি ইবাদাতে রত থাকতে রাসূলকে (সাঃ) নির্দেশ দেওয়া হয়।
সূরা মুরসালাত, আয়াত ১ থেকে ৫০
সূরা মুরসালাতে আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি দিয়ে কিয়ামাতের সত্যতা ঘোষণা করা হয়। মানুষকে শুক্রবিন্দু থেকে ক্রমান্বয়ে পূর্ণাঙ্গ করা হয়, জমিনে একইসাথে সজীব ও নির্জীব বস্তু থাকে, এগুলোর স্রষ্টা আল্লাহ আখিরাতের পুনরুত্থান ঘটাবেন। অস্বীকারকারীদের জন্য সেদিন বড় দুর্ভোগ। জাহান্নামে ছায়া থাকবে না। বিশাল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেখে মনে হবে হলুদ রঙয়ের উট। কোনো অজুহাত দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। আর মুত্তাকীদের জন্য থাকবে জান্নাতি ছায়া, প্রস্রবণ ও ফলমূল।



কার্টেসি : হুজুর হয়ে ফেসবুক পেজ

*




0 Comments 173 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024