FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

আজকের তারাবীহ | পর্ব-১৩

আজকের তারাবীহ | পর্ব-১৩

*

আজকের তারাবীহ | পর্ব-১০

পবিত্র মাহে রামাদানের প্রতিদিনের খতম তারাবীহ সালাতে তেলাওয়াতকৃত আয়াত সমূহের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ ও আলোচনা নিয়ে এই আয়োজন।

#আজকের_তারাবীহ

#রামাদান_১৩

সূরা কাহফ, আয়াত ৭৫ থেকে ১১০

আরো কিছুদূর যাওয়ার পর খাযির (আঃ) ও মূসা (আঃ) এমন এক জনপদে যান, যেখানকার লোকজন তাঁদের ভালো সমাদর করেনি। খাযির (আঃ) সেখানকার একটি পতনোন্মুখ প্রাচীর মেরামত করে দেন। মূসা (আঃ) আবারও অবাক হন যে পারিশ্রমিক ছাড়া তিনি এ কাজ করে দিলেন (অথচ কিছু আগে তাঁদের উপকার করা একটা নৌকাকে ফুটো করে দিলেন)।

খাযির (আঃ) বলেন এবার আর তিনি মূসাকে (আঃ) তাঁর সাথে রাখবেন না। কারণ প্রতিজ্ঞা করার পরও তিনি তিনটি ঘটনায়ই ধৈর্য হারিয়ে প্রশ্ন করে বসেছেন। এবার খাযির (আঃ) তিনটি ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। এক অত্যাচারী রাজা ছিলো, যে ভালো নৌকা দেখলে তা নিয়ে নিতো। তাই তিনি সেই নৌকাটিকে ত্রুটিপূর্ণ করে দিয়েছিেন। এছাড়া যে বালকটিকে হত্যা করলেন, সে বড় হয়ে তার মুমিন পিতামাতাকে ফিতনায় ফেলতো। এখন তার বদলে আল্লাহ একটি উত্তম সন্তান দেবেন।

আর সেই প্রাচীরের নিচে দুজন ইয়াতীমের সম্পদ আছে। প্রাচীর ভেঙে গেলে এলাকার দুষ্ট লোকেরা তা পেয়ে যাবে। এখন প্রাচীর মেরামত করে দেওয়ায় ইয়াতীমদ্বয় বড় হয়ে তাদের পাওনা খুঁজে নিতে পারবে। এসব জ্ঞান ওয়াহী বা ইলহামের মাধ্যমে আল্লাহ খাযিরকে দিয়েছেন। মূসা (আঃ) তখন বুঝতে পারেন আল্লাহ কাউকে না কাউকে মূসার চেয়েও বেশি জ্ঞান দিয়েছেন।

তারপর সমগ্র বিশ্ব শাসনকারী মুসলিম বাদশাহ যুলকারনাইনের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। তিনি পশ্চিম দিক পর্যন্ত অনেক রাজ্য অধিকার করেন। সেখানকার কুফরিকারী ও ঈমানদার লোকদের সাথে যথাযথ আচরণ করেন। তারপর পূর্বদিকে অভিযাত্রা করে এমন এক জনপদে পৌঁছান, যাদের সূর্য থেকে আড়াল নিতে পারার কোনো উপায় নেই।

তারপর আরেকদিকে অভিযাত্রা করেন। এমন জনপদের দেখা পান যারা ইয়াজুজ মাজুজের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তাদের অনুরোধে তিনি কোনো ট্যাক্স ছাড়াই লোহা-তামার এক সুদৃঢ় প্রাচীর গড়ে দেন। অবশ্য সে জাতির লোকেরা শ্রম দিয়ে সহায়তা করে। ফলে ইয়াজুজ মাজুজের আক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে যুলকারনাইন অহংকার না করে বলেন যে আল্লাহ যতদিন চাইবেন, ততদিনই এ প্রাচীর থাকবে। উল্লেখ্য কিয়ামাতের আগে ইয়াজুজ মাজুজ মুক্ত হয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাবে।

পূর্বেকার উম্মাতদের এসকল কাহিনী বর্ণনা করা আহলে কিতাবদের নিকট এটা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট যে মুহাম্মাদ (সাঃ) সত্য নবী, কারণ তারা ছাড়া অন্য কোনো আরব এসব জানতো না। আখিরাতে অবিশ্বাসী কাফিররা ভাবে তারা অনেক ভালো কাজ করছে। কিন্তু তাদের কুফরের কারণে সেগুলো আখিরাতে ওজনই করা হবে না। আর ঈমানদার ও নেক আমলকারীরা জান্নাতে থাকবে।
আল্লাহর যাত ও সিফাতের কথা লিখার জন্য যদি সকল সাগর কালি হয়ে যায়, তাতেও সব লেখা শেষ হবে না। মুহাম্মাদ (সাঃ) আমাদের মতোই মানুষ, পার্থক্য হলো তাঁর কাছে রবের নিকট হতে ওয়াহী আসে।

সূরা মারইয়াম, আয়াত ১ থেকে ৯৮

সূরা মারইয়ামে পূর্বেকার কয়েকজন নবীর কাহিনী বর্ণিত হয়। মুসলিমদের নিকট এসব বিষয়ের জ্ঞান খ্রিষ্টানদের কাছে, বিশেষ করে হাবশার খ্রিষ্টানদের কাছে এগুলো প্রমাণ করে যে মুহাম্মাদ (সাঃ) সত্য নবী।

যাকারিয়া (আঃ) অনেক বৃদ্ধ হয়ে যান। কিন্তু নিজ সন্তান না থাকায় ও চাচাত ভাইয়েরা অযোগ্য হওয়ায় তিনি আশংকা করেন তাঁর নবুওয়তি মিশন জারি রাখার মতো লোক থাকবে না। আল্লাহর কাছে দুআ করলে আল্লাহ তাঁকে এ বয়সেও সন্তান দেন। তাঁর নাম ইয়াহইয়া (আঃ), যিনি ছিলেন জ্ঞানী, নিরহংকারী, পিতামাতার খেদমতকারী।

মারইয়াম (আঃ) এর নিকট মানুষের রূপ ধরে এক ফেরেশতা আসলে তিনি তার থেকে আল্লাহর আশ্রয় চান (তাঁর পবিত্র চরিত্রের একটি প্রমাণ)। ফেরেশতা নিজের পরিচয় দিয়ে সংবাদ দেন যে পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই মারইয়ামের গর্ভে ঈসা (আঃ) আসবেন।

একদিন প্রসববেদনা উঠলে মারইয়াম (আঃ) লোকালয় থেকে দূরে চলে যান। সেখানে আল্লাহ তাঁর জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করেন। ঈসা (আঃ)-কে কোলে নিয়ে লোকালয়ে ফিরলে সকলে ছিঃছিঃ করতে থাকে। এ অবস্থায়ই ঈসা (আঃ) কথা বলে উঠে নিজের নবুওয়ত সম্পর্কে জানান। এতে সকলে বুঝতে পারে মারইয়াম (আঃ) ব্যভিচারিণী নন, আল্লাহর ইচ্ছায় অলৌকিকভাবে এই শিশুর জন্ম।

ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পিতার সাথে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় কথা বলে শির্কের বিরুদ্ধে দাওয়াহ দেন। তাঁর পিতা অনড় থাকে। ইবরাহীম তাঁর মূর্তিপূজক জাতি ও তাদের মিথ্যা উপাস্য থেকে নিজের বিচ্ছিন্নতা ঘোষণা করেন। এরপর ইসহাক, ইয়াকুব, ইসমাইল ও ইদরীস (আলাইহিমুসসালাম) এর মহান গুণাবলী বর্ণিত হয়। এঁদের বংশধররা ছিলেন ঈমানদার ও সৎ।

এরপর এমন লোকেরা আসলো যারা আল্লাহর অবাধ্যতা করলো। আখিরাতে তাদের পরিণামের ভয়াবহ বর্ণনা দেওয়া হয়। মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সকলের পুলসিরাত পার হওয়া ও ভিন্ন ভিন্ন পরিণতির কথা বর্ণিত হয়।

কাফিররা মুমিনদের তুলনায় নিজেদের সম্পদের প্রাচুর্য দেখিয়ে গর্ব করে। আল্লাহ তাদের মনে করিয়ে দেন যে তাদের পূর্বের অনেক সীমালঙ্ঘনকারী জাতিকে তিনি ধ্বংস করেছেন যারা তাদের চেয়েও বেশি ধনী ছিলো।

আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেন- খ্রিষ্টানদের এরকম নোংরা বিশ্বাসকে কঠোর ভাষায় খণ্ডন করা হয়।

সূরা ত্বা-হা, আয়াত ১ থেকে ১৩৫

সূরা ত্বা-হা মূসা (আঃ) এর দীর্ঘ ঘটনা সম্বলিত। পরিবার নিয়ে মিশরের দিকে চলার পথে মূসা (আঃ) দূরে আগুন দেখতে পান। আলো ও পথনির্দেশনা পেতে তিনি সেদিকে যান। আসলে তা ছিলো আল্লাহর প্রেরিত নূর। তুওয়া উপত্যকায় তিনি মূসা (আঃ)-কে নবুওতের আলো আর হিদায়াতের পথনির্দেশ দেন। তাঁর লাঠিকে সাপে পরিণত করা ও সূর্যের মতো ঝলমলে হাতের মুজিযা দেন। এরপর তাকে ফিরআউনের কাছে গিয়ে নম্র ভাষায় দাওয়াহ দিতে বলেন। তাঁর অনুরোধমতো হারুন (আঃ)-কেও নবী বানিয়ে পাঠানো হয়। মূসা (আঃ)-কে শিশুকালে কীভাবে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, আল্লাহর ও তাঁর শত্রু ফিরআউনের ঘরে লালিত করেছেন, তাঁর নিজের মা-কেই দুধমা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাঁর অন্তর জুড়িয়েছেন, পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়েছেন, এসব নিয়ামতের কথা আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দেন।

ফিরআউনের দরবারে গিয়ে মূসা ও হারুন তাওহীদের দাওয়াত দেন। ফিরআউন কথা ঘুরানোর জন্য আগেকার জাতিদের কথা জিজ্ঞেস করে। মূসা বলেন তাদের পরিণতি আল্লাহই জানেন, এভাবে তিনি প্রসঙ্গের ভেতর থাকেন। উজ্জ্বল হাতের মুজিযা দেখান। ফিরআউন এটাকে জাদু বলে আখ্যায়িত করে। কওমের এক উৎসবের দিনে মূসার সাথে সকল জাদুকরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আয়োজন করে। জাদুকরদের সে রাজকীয় পুরষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু জাদুকররা যখন তাদের দড়ি ইত্যাদি দিয়ে দেখানো ভেল্কিবাজি আর মূসা (আঃ) এর লাঠির সত্যিকার সাপ হওয়ার পার্থক্য বুঝতে পারো, তারা সবাই ঈমান এনে ফেলে। ফিরআউন রাগে অন্ধ হয়ে এটাকে মূসার ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে। জাদুকরদের শূলে চড়ানোর হুমকি দেয়। ঈমান আনা জাদুকররা নির্ভীকভাবে প্রত্যুত্তর দেয়।

বনী ইসরাইলকে ধাওয়া করতে গিয়ে ফিরআউন ও তার লস্কর লোহিত সাগরে ডুবে মরে। বনী ইসরাইল শাম ভূমিতে বসবাস শুরু করে।

তাওরাত দানের জন্য মূসা (আঃ)-কে আল্লাহ তূর পাহাড়ে ডেকে নেন। এও জানিয়ে দেন যে তাঁর অনুপস্থিতিতে সামিরি নামের এক লোক বনী ইসরাইলকে শির্কে লিপ্ত করেছে। মূসা (আঃ) রাগান্বিত হয়ে ফেরত এসে প্রথমে হারুনকে (আঃ) জেরা করেন। পরে বুঝতে পারেন যে বনী ইসরাইল তাঁর নির্দেশ অমান্য করে মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়েছে।

মূসা (আঃ) তাঁর কওমকে আবার সঠিক তাওহীদ শিক্ষা দেন। এরপর সামিরিকে ধরেন। সামিরি এমনকিছু দেখতো যা অন্যরা দেখতো না। জিবরীল (আঃ) এর ঘোড়া যেখানে পা ফেলতো, সেখানকার মাটিতে সে প্রাণের লক্ষণ দেখতো। স্বর্ণ দিয়ে বাছুর বানিয়ে সে তাতে ওই মাটির কিছু মিশিয়ে দেয়। ফলে বাছুরটি আওয়াজ করতো। একেই বনী ইসরাইলের মাবুদ হিসেবে সে উপস্থাপন করেছিলো। সে অভিশপ্ত হয়ে জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অস্পৃশ্য জীবনযাপন করে।

এরপর কিয়ামাতের কিছু বর্ণনা দেওয়া হয়। পাহাড়গুলো বালুর মতো উড়ে যাবে, ভূমি একেবারে টানটান সমান করে ফেলা হবে। মানুষ ভাববে দুনিয়ার জীবন একদিনের মতো ছোট ছিলো।

শয়তান কর্তৃক প্রতারিত হওয়ার পর আদম-হাওয়া আলাইহুমাসসালামের দুনিয়ায় আসার কাহিনী বর্ণিত হয়। আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে হিদায়াত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। যারা এর অনুসরণ করবে, তারা জান্নাতি। যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে, তারা জাহান্নামি। এই কুরআন সেই হিদায়াতের পূর্ণতা।
কাফিরদের বিদ্রুপ ও প্রাচুর্যের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সালাত কায়েম করতে আদেশ করা হয়। নবী যখন এসেই গেছে, কাফিররা তো আর অজুহাত দিতে পারবে না যে তারা হিদায়াতের ব্যাপারে জানতো না।


কার্টেসি : হুজুর হয়ে ফেসবুক পেজ

*




0 Comments 109 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024