FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

শবে বরাত সম্পর্কিত বিদাত এবং এর সহী ব্যাখ্যা

শবে বরাত সম্পর্কিত বিদাত এবং এর সহী ব্যাখ্যা

*

আসসালামুয়ালাইকুম!

শুরুতেই একটা কথা বলে নি, এই পুরো লিখা আমার গতকালের সারা দিন রাতের তর্যমা।
মূল আলোচনা আমার না, আমি কেবলমাত্র আমার দেখা লেকচার এবং গবেষণা একত্র করে আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে লিখিতভাবে দিচ্ছি। তবে আমি কিছু এডিশনাল ব্যাখা এড করেছি যা নগন্য।
এই লিখার মূল আলোচকগন হলেন -

১) ডক্টর খন্দোকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহেমাউল্লাহ
২) শায়েখ আহমাদুল্লাহ
৩) মুফতি মেনক ( Mufti Menk)
৪) ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আলি মিরজা


এই ৪ স্কলারের বক্তব্য আমি একত্র করে পেশ করতেসি।

--------------

আমরা একটা সাধারণ ব্যাপার ঝালিয়ে নি, সেটা হলো আল্লাহ তায়ালা আমাদের কুরআন দান করেছেন। এতে সব কিছুর বিবরণ দেয়া। কিন্তু এই কুরআন হলো মূলভাব কিংবা সার কথা। তাই আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা) দ্বারা এই কুরআন এর ব্যাখ্যা এবং ইবাদতের যাবতীয় কিছুর বিবরণ দিয়ে দিয়েছেন।


রাসূল (সা) তার বিদায় হজ্জের মর্ম কথায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে ইসলাম পরিপূর্ণ। এর মাঝে নতুন করে ইবাদত আর এড হবে না।

এখন আমরা যদি ইবাদত মনে করে নতুন কিছু ইবাদত হিসেবে মানি তাহলে হয় রাসূল (সা) তার দায়িত্ব পালন করেন নি অথবা আমরা রাসূল (সা) থেকে ইসলাম বেশি বুঝে গেছি নায়ুযুবিল্লাহ।



এখন আসেন শবে বরাত বলতে আমরা কি বুঝি বা কি অর্থ এটার। আমরা মনে করি এর অর্থ ভাগ্য পরিবর্তন কিংবা লিখনের রাত।

আসলে বারা-আত আরবি শব্দের মূল অর্থ মুক্তি,ছিন্ন,বিছিন্ন করা। তবে বাংলা ভাষায় এটা আমরা বুঝি বরাত বা ভাগ্য হিসেবে।

কিন্তু এর মাসনুন নাম " লায়লা তুন নিসপে মিন সাবান " অর্থ হলো মধ্য সাবানের রাত।



এখন আসেন একদম অকাট্ট সহিহ একটা হাদিস দেখি যেটা ৮ জন সাহাবী - আবূ মূসা আশআরী, আউফ ইবনু মালিক, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর, মুয়ায ইবনু জাবাল, আবু সা’লাবা আল-খুশানী, আবূ হুরাইরা, আয়েশা ও আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত।


হাদিস টি হলো -


"মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃকপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।"



ইবনু মাজাহ, আস- সুনান ১/৪৪৫; বাযযার, আল-মুসনাদ ১/১৫৭, ২০৭, ৭/১৮৬; আহমাদ ইবনু হাম্বল, আল-মুসনাদ ২/১৭৬; ইবনু আবি আসিম, আস-সুন্নাহ,পৃ ২২৩-২২৪; ইবনু হিববান, আস-সহীহ ১২/৪৮১; তাবারানী, আল-মুজাম আল-কাবীর, ২০/১০৮, ২২/২২৩; আল-মুজাম আল-আওসাত, ৭/৬৮; বায়হাক্বী, শু’আবুল ঈমান, ৩/৩৮১; ইবনু খুযায়মা, কিতাবুত তাওহীদ ১/৩২৫-৩২৬।



এর অর্থ হলো এই রাতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি তার রহমতের চোখে তাকান এবং যাদের জীবনে শিরক এবং হিংসা-বিদ্বেষপূর্ণ স্বভাব বা পাপ নেই তাদের সকলকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন।


অর্থাৎ এই রাতের ফজিলত ব্যাপক। কিন্ত সমস্যা টা অন্যখানে। তাতে পরে আসি, তার আগে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহেমাউল্লাহ র একটা কথা আমি কোট করতে চাই -


" বাংলাদেশের মানুষদের জন্য শিরক বর্জন করা কঠিন, খুবই কঠিন, আর হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করা অসম্ভব, কাজেই শবে বরাতের ফজিলত পাওয়া টা বেশ কঠিন কাজ "


এখন কথা হলো তিনি এই কথা কেনো বললেন? শিরক বর্জন করা কঠিন আমরা সবাই এটা জানি, আমরা নিজেদের কথা দিয়ে, কাজ দিয়ে অনেকেই শিরকে লিপ্ত আছি এই দেশের। তবে সেটা বর্জন করার লোক সংখ্যাও নেহাত কম না।


কিন্ত এই হিংসা-বিদ্বেষ তো মহামারি আকার ধারণ করছে। সাধারণ মানুষ হতে আলেম ওলামা কোন অংশ ই হিংসা মুক্ত হতে পারে নি মোটের উপরে।

তাই তিনি এই উক্তি করেছিলেন।


এখানে অনেকে ভাবতে পারেন আরে আমি তো হিংসা করি না, আমি অনেক বেটার ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি একটা অপ্রাসঙ্গিক উক্তি দিচ্ছি, আসলে না দিয়ে পারছি না


অস্ট্রিয়ান নিউরোলজিস্ট সিগমুন্ড ফ্রয়েড এক লিখায় বলেছিলেন যে - " মানুষ নিজের সম্পর্কে যা ভাবে আসলে সে তা নয়, লোকে কিংবা তার পারিপার্শ্বিক মানুষগুলো তাকে নিয়ে যা ভাবে আসলে সে তাই ই "



আমরা আবার আগের আলোচনা তে আসি,
এখন কথা হচ্ছে ফজিলত ও পেলাম আবার শর্তও পেলাম তাহলে বাকি থাকে কি।
বাকি থাকে ইবাদত মনে করে বিদাত করা।


কেমন সেটি?


কিছু আছে ভ্রান্ত ধারণা যা ঈমান ও নষ্ট করতে পারে, যেমন এই রাতে ভাগ্য লিখা হয় বা পরিবর্তন করা হয়। আবার অনেকে বলে এই রাতে লাওহে মাহফুজে কুরআন নাজিল হইছে আরো ইত্যাদি। এই সকল ভ্রান্ত কথাগুলোর কোন ভিত্তি নাই। এমনকি জইফ হাদিসেও না।

এই কথা স্পষ্ট বলেছেন ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আলি মিরজা।



এর পর আসেন নামাজ এবং রোজা নিয়ে।


অনেকে বলে ৮ রাকাত,১৪ রাকাত, ৫০ রাকাত, ১০০ রাকাত কিংবা সারা রাত সহ হাজার বার সূরা ইখলাস, ৫০ বার সূরা ইয়াসিন, বা দূরূদ লাখ খতম ইত্যাদি ইত্যাদি রেওয়াতের অভাব নাই যার প্রতিটার কোন সহিহ সনদ নাই সবটাই বানোয়াট মন গড়া এবং ভিত্তিহীন।



এই রাতে আপনি যদি শিরক এবং হিংসামুক্ত মানুষ হন তাহলে ঘুমায় থাকলেও আপনি মাফ পাবেন, গল্প করলেও মাফ পাবেন। এতে কোন সন্দেহ নাই।



আল্লাহ র রাসূল কিংবা সাহাবীগন কিংবা তাবেঈনগন অথবা তাবেঈ তাবেঈন কেউ এই প্রকারের ইবাদত করেন নাই।


একটা জাল হাদিস ও নাই এই রাত উপলক্ষে কিছু করার।


আপনার যদি সাবান মাস এতই ভালো লাগে অথবা রাসূল (স) এর এই মাসের ইবাদত এর মত ইবাদত করতে চান তাহলে মা আয়েশা র বর্ণনা মত রাসূল (স) সারা সাবান মাস রোজা রাখতেন। আপনিও রাখেন। কেন ১/২/৩ স্পেসেফিক ভাবে রাখেন?


এতগুলো কথার মূল কথা হলো এই রাতে বিশেষ কোন আমল নাই। জাস্ট আপনি যা রেগুলার করেন সেটাই এনাফ। আপনি ইশার সালাত পড়ে খাওয়া দাওয়া করেন, রাত গভীর হলে তাহাজ্জুদ পরেন। দোয়া করেন। যেমন টা সাধারণ দিনে করে থাকেন। এটাই যথেষ্ট।


এখন আরেকটা জিনিস আমরা বিশ্লেষণ করব যে কেনো এই রাতকে নিয়ে এত মাতামাতি?

কারণ টা লুকিয়ে আছে শবে বরাত নামের মাঝে।
আমরা ইন্ডিয়া,বাংলাদেশ, পাকিস্তানী রা মনে করি এই দিয়ে ভাগ্য বদল হয়া যাবে। সারা বছর ভাগ্য প্রশন্ন থাকবে।

তাই এই রাতে যত পারি নামায পড়ে টরে আল্লাহকে খুশি করে ভাগ্য বদলায় ফেলি।


উপরিভাগ দেখলে ব্যাপার টা সুন্দর কিন্ত সিস্টেম আল্লাহ এবং আল্লাহ র রাসূলের। আমাদের না।

এখন আমরা কিছু পয়েন্ট দেখব যা করলে আসলেই বরকত আসে, ভাগ্য ও পরিবর্তন হয়।



১) মাতা-পিতার হক সর্বোচ্চ ভাবে পালন করা। এটা হলো একদম মেজর, এটার ফজিলত হাজার লিখেও শেষ করা যাবে না।


২) রক্তের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখা। এতে করে নেক হেদায়েত, ভাগ্য, রিজিক আল্লাহ বাড়িয়ে দেন।


৩) প্রচুর পরিমানে দোয়া করা। আল্লাহ দোয়া পছন্দ করেন এবং এই দোয়া ই পারে আপনার ভাগ্যের মোড় ঘুরাতে।


৪) সারাবছর ধরে ভালো কাজ গুলো করতে থাকা। একদিনে সব উলটানো সম্ভব না। রেগুলারিটি মেইনটেইন করতে হবে।



এগুলো হলো রিজিক,হায়াত,ভাগ্য বাড়ানোর মূল ব্যাপার।




ওহ একটা মজার ব্যাপার আপনাদের বলি, আমাদের দেশে এই রাতে হালুয়া রুটির একটা ফেস্ট হয়। অনেকে জেনে করেন অনেকে না জেনে করেন। না জেনে করার সংখ্যা ই বেশি।

কিন্ত এর মূল যে প্রবর্তক তাদের মতে রাসূল (স) এর দাত মোবারক যুদ্ধে ভেংগে গিয়েছিল, তাই উনি নাকি হালুয়া রুটি খেয়েছিলেন ( ডাহা মিথ্যা), তাই সেই শোকে নাকি আমাদের হালুয়া রুটি খেতে হবে।


যাইহোক খাওয়ার জিনিস খাবেন, কিন্ত উপলক্ষ যেন বেদাতি না হয়।

একই বিরিয়ানি খিচুরি আপনি ৩ দিনা অথবা ৪০ শা তে করবেন তা বিদাত হবে, আবার সেই খিচুরি বিরিয়ানি এমনি খাবেন তা হালাল হবে। এখানেই আশরাফুল মাখলুকাতের পরিচয়।


লিখা মনে হয় অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে, আর বড় কর‍তে চাচ্ছি না এখন ভোর ৫ টা বাজে।

আরেকটা কথা বলি, নিজের গবেষণার বিকল্প নাই, তাই আপনি নিশ্চই এগুলো ঘাটবেন। আর কার কথা নিবেন সেটা আপনার আকল বা বিবেক নামের সত্বা দিয়ে বুঝার চেস্টা করবেন।


আর সবকিছুর উপরে নিজের মনের দরজা জালানা শিকল মেরে রাখবেন না। সব কিছু দেখবেন শুনবেন তারপর সহীহ টা নিবেন
আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন।



*




14 Comments 290 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024