FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

আমার জন্মদিনে! প্রথম কিস্তি

আমার জন্মদিনে! প্রথম কিস্তি

*

সচারাচর আমার জন্মদিনের কথা মনে থাকে না৷ অন্যেরটা তো অনেক দূরে এমনকি নিজের টাও মনে থাকে না। আজকের দিনটাও তার ব্যতিক্রম হয় নি। তবে কিছু বন্ধুদের অগ্রীম শুভেচ্ছা আমাকে ঠিক ৪/৫ ঘন্টা আগে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল আজ আমার জন্মদিন।

ডিউটিরত অবস্থায় নিজের জন্মদিনের কথা মনে আসায় খুব উচ্ছ্বসিত হই নি, অবশ্য অন্য সময় যে হতাম ব্যাপারটা তেমন না। তবে রাত ১২ টা পর্যন্ত টুকটাক প্যাশেন্ট দেখার পর বুঝছিলাম আজকে রাত টা একটা শান্তির রাত হতে যাচ্ছে! মোস্ট প্রোবাবলি আমার জন্মদিনের উপহার হিসেবেই এমন হতে পারে।

ওয়ার্ড বা কেবিনে কোন সিরিয়াস প্যাশেন্ট ভর্তি নাই সুতরাং আজ রাত টা রিল্যাক্স হবে অনলি রিল্যাক্স! ইন্টার্নশীপ এর টাইম থেকেই যা আমার কাছে পরম আরাধ্য হয়ে ছিল। ওহ আরেকটা মিথ আছে আমার ডিউটি টাইমে, স্পেশালি নাইটে, আমি যদি জেগে থাকি তাহলে প্যাশেন্ট আসে না কিন্তু ঘুমাইলেই বিপদ, হয় প্যাশেন্ট আসে না হয় ওয়ার্ডে কোন প্যাশেন্টের অবস্থার অবনতি হয়। তাই সবকিছু এড়াতে আমি জেগেই ছিলাম।

ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে বন্ধুদের সাথে তুমুল আড্ডা দিয়ে ভালোই ছিলাম। কিন্তু ভুলে গেছিলাম ঝড় আসার আগে পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। আর আমি অতি উৎসাহে খেয়াল ই করি নি আজকের পরিবেশ শান্ত। অস্বাভাবিক রকমের শান্ত!

ঠিক সাড়ে ৩ টার দিকে ওয়ার্ড বয় জিহাদ বলল স্যার প্যাশেন্ট আসছে, আমি বললাম পাঠাও। সাধারণত এইদিকে এই সময় যে প্যাশেন্ট আসে তারা ম্যাক্সিমাম ই PUD ( গ্যাস্ট্রিক) সংক্রান্ত বুকে ব্যাথা নিয়ে আসে, একটা Pantonix ইঞ্জেকশন দিব আর প্যাশেন্ট পাঠায় দিব। ইজি ট্রীটমেন্ট রাইট?

আর যেহেতু হাসপাতালে ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা নাই সো ইমার্জেন্সি প্যাশেন্ট আসার ও কথা না। বাট রোগীকে যখন দেখলাম তখন ই বুঝছি ও মি. রাইট ইউ আর রঙ! ভেরি ভেরি রঙ! প্যাশেন্ট কে দেখেই বুঝছি হয় এইটা Acute Exacerbation of COPD অথবা Infective Exacerbation of Bronchial Asthma. আর আনফরচুনেটলি ভেরি আনফরচুনেটলি এই প্যাশেন্ট ম্যানেজ করার জন্য যে লজিস্টিক দরকার তা এই হাসপাতালে নাই।

সো আমি এক ঢাল তলোয়ার বিহীন সৈনিক যার সামনে এক বিশাল যুদ্ধ! আমি স্পষ্টতই বিশ্বাস করি রোগীকে সুস্থ করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আমার কোন ক্ষমতাই নাই তাকে সুস্থ করার।

আমার মাধ্যমে আল্লাহ শুধু চেষ্টা করাইতে পারেন আর তারপর তিনি সুস্থতা দান করেন কিন্তু আজ আমি এমন একজায়গায় আমার মনে হচ্ছে আল্লাহ হয়তবা আমাকে চেষ্টা করার ও অবকাশ দিবেন না।

পরমুহুর্তেই মনে পরল কোরআনের সেই বিখ্যাত আয়াত " আল্লাহ মানুষের উপর সেই বোঝা চাপান না যার ভার সে বহন করতে অক্ষম। " সো বলতে গেলে খালি হাতে নেমে গেলাম যুদ্ধক্ষেত্রে, প্রথমেই প্যাশেন্ট এর এটেন্ডেন্স দের কে বললাম আপনার রোগীকে এখানে চিকিৎসা দেয়ার যন্ত্রপাতি নাই সো তাকে আই সি ইউ তে শিফট করতে হবে যত তাড়াতাড়ি পারেন এম্বুলেন্স ম্যানেজ করে নিয়ে আসেন। এখানে যতটুকু করা সম্ভব আমি করছি।

চলবে......

*




9 Comments 260 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024