FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

টিকটক সেলিব্রিটি

টিকটক সেলিব্রিটি

*

পাত্রী পক্ষের সামনে বসে আছি। কিন্তু পাত্রী দেখতে এসে যে নিজেই বিয়ের পাত্রী হয়ে যাবো এমন টা কখনও ভাবিনি। পৃথিবীতে হয়তো আমি একমাত্র মেয়ে যে কিনা নিজেই বিয়ের আগে তার শ্বশুর বাড়ি এসে বসে রয়েছি।

একটা মাত্র ভাই আমার। ভাইয়ার ইচ্ছা আমার পছন্দের মেয়ে করবে। আমি ও ভাবলাম পাত্রী দেখতে যাওয়া মানেই ‌ফ্রিতে মজার মজার খাবার খাওয়া।তাই চলে এসেছিলাম ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে। মেয়েকে আমরা কিছু জিজ্ঞেস করব তার আগেই মেয়ের মা আমাকে জিজ্ঞেস করল, নাম কি তোমার মা?

শীতল রহমান।

মাশাআল্লাহ তোমার নাম যেমন শীতল , তেমনি দেখতে ও তুমি শীতল প্রকৃতির।

পড়াশোনা কিসে কর মা?

হিসাববিজ্ঞান নিয়ে অনার্স করছি।

মাশাআল্লাহ খুবই ভালো। তোমার বাবা...

আন্টি আমরা মেয়ে দেখতে আসছি।এসব তো আমরা জিজ্ঞেস করব ।তা নয় তো আপনি আমাকে সব কিছু জিজ্ঞেস করছেন। বিয়ে টা আমার ভাইয়ার, আমার না।

আরে রাখো তো তোমার ভাইয়ার বিয়ে। আমার ছেলের জন্য ছয় মাস ধরে মেয়ে খুঁজছি , কিন্তু মনের মতো মেয়ে পাচ্ছি না।আজ যখন আমার মনের মত মেয়ে পেয়েছি তখন আর তোমাকে ছাড়ছি না।

আমি আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে পারব না আন্টি?

কেন মা? আমার ছেলে একজন নামকরা ডেন্টিস্ট,
দেখতে ও মাশাআল্লাহ। তাহলে তোমার সমস্যা কোথায় মা?

আপনার ছেলে অনেক ফর্সা। আমার ফর্সা ছেলে পছন্দ নয়। ফর্সা ছেলেদের চেহারায় মধ্যে বো*কা সো*কা ভাব থাকে,দেখতে কেমন ব*ল*দ ব*ল*দ লাগে।তারপর আবার দাঁতের ডাক্তার।না জানি প্রতিদিন কত মেয়ের সং*স্প*র্শে যায়?

দেখ মা সংসার করতে গেলে একজন যদি আ*গু*ন হয়,অপর জন কে পানি হতে হয়। তুমি তো চালাক আমার ছেলে বো*কা হলে ও কোন সমস্যা নেই।বো*কা ছেলেদের সাথে সংসার করে শান্তি আছে, এদের কে উঠতে বললে উঠে,বসতে বললে বসে।

এই ব্যাপার টা মানলাম। কিন্তু ডেন্টিস্টের ব্যাপার টা মানতে পারছি না। দাঁতের ডাক্তার মানেই রোগীর কা*ছা*কা*ছি গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া।

এই শাফিন ,আজ থেকে তুই মেয়ে পেসেন্ট দেখবি , কিন্তু তাদের দিকে তাকাবি না।

মানে কি আম্মা? আমি একজন ডেন্টিস্ট। আমার কাজ হচ্ছে মেয়েদের দেখা।না মানে তাদের দিকে না তাকালে আমি কিভাবে দাঁতের চিকিৎসা করব?

অবশেষে ভাইয়ার বদলে আমার বিয়ে টা হয়ে গেল। ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে এসে নিজেই ব‌উ হয়ে গেল এমন খবর মূহুর্তের মধ্যে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল ।
দলে দলে মানুষ আসল আমাকে দেখতে। কিন্তু ব্যাপার টা আমার মোটেও ভালো লাগল না।
পাশের বাসার এক আন্টি শ্বাশুড়ি কে বললেন, ভাবি আপনাকে কতো বার বললাম, "আমার বোনের মেয়েটা কে আপনার ছেলের বউ করেন" করলেন না। অথচ ছেলের বিয়ে দিলেন একটা শ্যাম বর্ণের মেয়ের সাথে । কোথায় শাফিন আর কোথায় এই মেয়ে?

অনেক বলে ফেলছেন ভাবি। আমার ছেলে শীতল কে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। শীতলের শ্যাম বর্ণ নিয়ে শাফিনের বা আমার কারো কোন সমস্যা নেই। তাহলে আপনার এত সমস্যা হচ্ছে কেন ভাবী?

"আম্মার কথা শুনে মূহুর্তের মধ্যে মন টা ভালো হয়ে গেল"। শাবনূর আর রিনা খানের ব‌উ শ্বাশুড়ির যু*দ্ধ সিনেমা দেখে ভেবেছিলাম "আমার ও হয়তো শ্বাশুড়ির সাথেও এমন যু*দ্ধ লেগে থাকবে"। কিন্তু এখন দেখছি আমি নতুন করে আর ও একটা আম্মা পেয়েছি।

দুই হাতে মেহেদি লাগিয়ে বসে আছি। নতুন ব‌উ বলে কথা হাতে মেহেদি না দিলে হয় নাকি? এদিকে প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।হাতে মেহেদি থাকার জন্য কিছু খেতে ও পারছি না।এর‌ই মধ্যে দেখি শ্বাশুড়ি আম্মা বিরিয়ানি নিয়ে আসছে।" বিরিয়ানি দেখেই জিভে পানি এসে গেল"। কিন্তু কি আর করার? মেহেদির জন্য খেতে পারছি না। আম্মা আমার সমস্যা বুঝতে পেরে বললেন, আমার হাতে খাইতে কি‌ তোমার কোন আপত্তি আছে মা?

না আম্মা। আপত্তি কেন থাকবে? আপনি তো আমার আপন আম্মার থেকে ও ভালো। নিজে হাতে আমাকে খাইয়ে দিতে চাচ্ছেন।

আম্মা আমাকে খাইয়ে কপালে একটা চু*মু দিয়ে চলে গেলেন। আমি কখনো ভাবতে পারিনি শ্বাশুড়ি আম্মার এতো ভালোবাসা পাবো।

সকাল ৭ টা
আম্মা রান্না করছে আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। আমি চেয়েছিলাম নিয়ম অনুযায়ী আজ সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে। কিন্তু আমার শ্বাশুড়ি আম্মার এক কথা নতুন ব‌উ, নতুন ব‌উয়ের মতো থাকবে। কোন ‌কাজ করা লাগবে না। আমি আমার ছেলের জন্য ব‌উ এনেছি, কোন কাজের লোক না।

আম্মার কথা শুনে নিজের অজান্তেই চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।

আমার অনেক ইচ্ছা টিকটক করার, কিন্তু আমার আম্মার জন্য করতে পারি না। দুপুরে শুয়ে শুয়ে টিকটক ভিডিও দেখছিলাম, এমন সময় আম্মা এসে জিজ্ঞেস করল,আচ্ছা শীতল তোমার শখ কি? কি হতে চাও? আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব তোমার স্বপ্ন পূরণ করার।

"একজন টিকটক সেলিব্রিটি হ‌ওয়ার"।

ও মা তাই নাকি! আমার ও টিকটক বেশ ভালো লাগে।চলো আমরা শ্বাশুড়ি বৌমা মিলে টিকটক ভিডিও করি।

সত্যিই আম্মা?

হ্যাঁ মা। তুমি আমার আর একটা মেয়ে।আর মেয়ের সাথে এইটুকু মজা করতেই পারি। আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি শাড়ি টা চেঞ্জ করে আসি।

তারপর আমি আর আম্মা মিলে অনেক টিকটক ভিডিও বানালাম। কিন্তু যখন ই ভিডিও আপলোড করতে যাবো তখন ই শুনতে পেলাম,
"এই যে নবাবের ঘরের নবাবজাদি কল্পনার শ্বাশুড়ির সংসার করা শেষ হলে এই খাবার গুলো খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন"।

মানে কি আম্মা? তুমি এইখানে কেন? আমি তো আমার শ্বাশুড়ির সাথে টিকটক ভিডিও করছিলাম।

"জ্বি করছিলেন"।তবে বাস্তবে না কল্পনায়।

ধ্যাত, তোমার এই টেপরেকর্ডার টা একটু পরে বাজাতে পারলে না। আমি আর শ্বাশুড়ি আম্মা মিলে টিকটক ভিডিও করলাম অথচ তোমার টেপরেকর্ডার চালু করার জন্য আপলোড দিতে পারলাম না।

"ফা*ডা কপাল আমার" যেইখানে অন্য মেয়েরা জামাই নিয়ে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যায় সেইখানে আমি কল্পনায় শ্বাশুড়ির প্রেমে হাবুডুবু খাই।কি আর করার?
মনের দুঃখে শ্বাশুড়ি আম্মা কে আকাশের ঠিকানায় একটা চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিলাম।

"ওগো শ্বাশুড়ি আম্মা হুদাই কল্পনায় আসেন
বাস্তবে কেন আসেন না"

সমাপ্ত

কল্পনার_শ্বাশুড়ি
অপরাজিতা_রহমান(লেখায়)

*




5 Comments 272 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024