FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

নীলের ভালোবাসার পরীক্ষা

নীলের ভালোবাসার পরীক্ষা

*

গার্লফ্রেন্ডের চেয়ে, তার মা এত ভয়ংকর হতে পারে তা নীলের জানা ছিলনা।

সেদিন নীল আর মিতু রিক্সায় ঘুরতেছিল। কোথায় থেকে যেন, মিতুর মা তাদের দেখে ফেলে।

রাতে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে, নীল ফোন রিসিভ করল...
-- হ্যালো...

ওপাস থেকে বলল,
"আমি মিতুর মা বলছি"

আভার ভাই নীল থতমত খেয়ে গেল। তাদের রিলেশনের কথা কেউ জানে না, শুধু নীলের এক ফ্রেন্ড, আরমান জানে।

কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
"জ্বি আন্টি"

মিতুর মা বলল,
"মিতুর কাছ থেকে সব শুনেছি। আমি তোমার সাথে কাল সরাসরি কথা বলতে চাই। কাল কি তোমার সময় হবে"

নীল আমতা আমতা করে বলল,
"জ্বি আন্টি"

কোথায় দেখা করবে, তা ঠিক করে ফোন রেখে দিল।

একটু পর নীল মিতুকে ফোন করে জানতে চাইল ঘটনা কি? মিতু বলল,
"আজ তোমাকে আমাকে রিক্সায় একসাথে মা দেখে ফেলছে। বাড়ি আসার পর মা জানতে চাইলে, আমি সব বলে দিছি। বলছি, তুমি অনেক ভালো ছেলে, তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। কাল তোমাকে মা যে প্রশ্ন করবে, সোজা করে উত্তর দিবা, কোন ঘাউরামি করবা না।"

মিতুর সাথে বেশি কথা বলল না নীল। ফোন রেখে দিল। ওর টেনশন হচ্ছিল খুব। টেনশনে রাতে ঘুমাতে পারল না।

আন্টির আসার কথা বিকাল ৪টায়। নীলের টেনশন হচ্ছিল তাই সে ৩ টা হতেই আগে এসে "আয় খাই রেস্টুরেন্ট" এ বসে আছে।

বিকাল ৪টায় মিতুর মা আসল, মিতুকে সাথে আনেনি। নীলের সামনে এসেই বলল, তুমি নীল?

নীল বলল, জ্বি.......

খাবার অর্ডার করা হলো। নীলের গলা দিয়ে খাবার নামছে না টেনশনে।

হঠাৎ আন্টি বলল,
"তুমি কি সত্যি মিতুকে ভালোবাসো?"

নীল বলল,
"আমারা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসি"

আন্টি বলল,
"তোমাকে ছোট একটা পরীক্ষা দিতে হবে। যদি তুমি পাশ করতে পার, তাহলে আমি বুঝব সত্যি তুমি আমার মেয়েকে ভালোবাসো।''

নীল বলল,
"বলুন কি পরীক্ষা দিতে হবে? যেকোন পরীক্ষাই দিতে পারব।"

আন্টি বলল,
"গুড বয়! তোমাকে একদিনের জন্য গুলিস্থান গিয়ে হকারগিরী করতে হবে। তাহলেই বুঝব, তুমি আমার মেয়েকে ভালোবাস। সত্যি তুমি ভালোবেসে থাকলে, তার জন্য তুমি সবকিছু করতে পারবে।"

নীলের মুখ হা হয়ে গেল। কোন কথাই মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না...

আন্টি আবার বলল,
"তোমাকে তাজমহল বানাতে বলি নাই, বার বছর বরশি বাইতে বলিনাই, পাহাড় কাটতেও বলিনাই! একদিন হকারের কাজ করবা, এটা এমন কি কঠিন কাজ?"

নীল ঢোক গিলতে গিলতে বলল,
পারব...তয় মিতু যদি জানতে পারে...

আন্টি বলল,
"মিতু জানবে না। গুলিস্থান আমার লোক থাকবে তোমাকে দেখার জন্য। কাল সারাদিন তোমার ডিউটি।"

নীল থ মেরে বসে রইল। আন্টি খাবারের বিল দিয়ে বের হয়ে গেল।

কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। নীলের বন্ধু আরমানকে ফোন দিয়ে বলল। আরমান বলল,
"আরে ব্যাপার না, একদিনই তো, তাছাড়া সব কাজেরই অভিজ্ঞতা থাকা দরকার।"

পরদিন কিছু ইদুর-তেলাপোকা মারার ঔষুধ নিয়ে গুলিস্থান রাস্তায় চলে গেল নীল। চারদিকে তাকিয়ে দেখল পরিচিত কেউ আছে কি না....

পরিচিত কেউ নেই। হাতে ইদুর-তেলাপোকা মারার ঔষুধ নিয়ে শুরু করল হকারী.....

ইদুর মারেন,
তেলাপোকা মারেন,
ছারপোকা মারেন,
পিপড়া গুলা মারেন।
জাদুর কাঠি ম্যাজিক চক,
দাগ দিলে মরে,
ঘষা দিলে মরে।
তেউল্যাচুরা মরে,
চুরার ঘরে চুরা তেউল্যাচুরা,
জাগায় খায় জাগায় বেরেক,
ইদুর গুলা বেরেক,
লাইন এ খায় ছিরিয়ালে মরে,
কাইত হয়া খায় চিত হয়া মরে,
লাফায়া খায় ধপায়া মরে,
ইদুর গুলা মরে....
ইদুর চিকা মারামারি,
নষ্ট করে বাসা বাড়ি,
ঔষুধ কিনেন তাড়াতাড়ি।
ময়নার মার ঘুম নাই,
ইদুর তর বাঁচন নাই,
ধরা পড়লে জামিন নাই,
জাগায় খায় জাগায় বেরেক,
ইদুর গুলা বেরেক।
মাত্র ২০টাকা ২০টাকা ২০টাকা।

সন্ধ্যায় গুনে দেখে ভালই ইনকাম হইছে, ২২০ টাকা। ৮৯ টাকা দিয়ে রবি এক জিবি কিনল। অনেকদিন হলো এমবির জন্য ফেসবুক চালাইতে পারে না।

মনে মনে ভালই লাগছে নীলের, দিনটা ভালই পার করতে পারছিল বলে। কিন্তু সেই ভালো বেশিক্ষন টিকল না...

ফেসবুক লগইন করেই দেখে, ম্যাসেনজারে মিতুর ম্যাসেজ সহ একটি পিক পাঠাইছে..
ম্যাসেজে লেখা, "শালা, তোরমত হকারের সাথে এতদিন রিলেশন করছি, ঘৃনা লাগছে ভাবতেই।"
পিকটাও নীলেরই, দুই হাতে ইদুর মারার ঔষুধ সহ গলায় ঔষুধের টুপলা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

ম্যাসেজ রিপ্লাই দিতে পারল না। মিতু ব্লক করে দিয়েছে। মোবাইলে ফোন দিল, তাও ব্লক।

কোন উপায় না পেয়ে আন্টিকে ফোন দিল। আন্টি ফোন রিসিভ করল না। বুঝতে পারল, এসব আন্টিরই কাজ। মনের দুঃখে আন্টিকে ম্যাসেজ দিল, "আন্টি এইভাবে বাঁশ দিলেন"

একটুপর আন্টি রিপ্লে দিছে,
"যে বাঁশ দিছি, ওটা দিয়েই কিছু কইরা খা, আমার মেয়ের পেছনে না ঘুরে।"

হকার..

লিখাঃ সংগৃহীত

*




19 Comments 550 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024