FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

তুয়া [পার্ট :: ০৩ /অন্তিম পর্ব]

তুয়া [পার্ট :: ০৩ /অন্তিম পর্ব]

*



তুয়া [পার্ট ::০২]

সাবুঃ আচ্ছা দেখ তাহলে!

এমন সময় মিসেস ইভা রাগি মুখে সাবুদের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ডাক দিলো,

" সাবু তুয়া এতো ডাকছি শুনছোনা কেনো দুজনে, আসো খেয়ে নেও এরপর গল্প করবে যতখুশি। "

কি আর করা দুজন খেতে গেলো,, খাওয়া শেষে রুমে এসে তুয়া বায়না ধরলো," সাবুপি ম্যাজিক টা দেখাও,, "

সাবুঃ ওও ভুলিস নি তাহলে আচ্ছা আয় দেখাই🤦‍♀️

তুয়াঃহ্যাঁ দেখাও😍,,

" সাবু কাটা জাতিয় কিছু একটা নিলো। একটা চকলেট খাচ্ছে তুয়া,একটা বাইট দিয়ে হা করে তুয়া গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে,, চোখের পলক পরছেনা তার।ভাব টা এমন যেনো চোখের পলক ফেললে সে অনেক বড় কিছু একটা মিস করে ফেলবে। "

তুয়া ঃ কি করছো সাবুপি,, সুই নিলে কেনো?

সাবুঃ আরে এটা দিয়েই তো ম্যাজিক করবো রে বোকা।😎

তুয়াঃ আরেকটা বাইট দিলো,খুব চিন্তিত মুখ নিয়ে বললো, কিভাবে ম্যাজিক করবা এটা দিয়ে 🤨🤔

সাবু ঃ চুপ করবি? সব যদি বলেই দেই ম্যাজিক টা করে কি হবে তা😒[ একটু ধমক দিয়ে]

তুয়াঃ আরেকটা কামড় দিয়ে মুখ ভর্তি চক্লেট নিয়ে বললো,আচ্ছা হইসে হইসে করো তো ম্যাজিক,হুহ যে একটা ম্যাজিক পারে তাতেই হুদ্দাই ভাব দেখায় খালি হুহ😒

সাবুঃ কি বললি🤨 যা তোর ম্যাজিক দেখা লাগবেনা যাহ😒

তুয়াঃ আরে আরে রাগ করো কেন এমনি বলসি তো😁 দেখাও না ম্যাজিক টা আর কিছু বলবোনা এই যে মুখে আঙুল দিয়ে বন্ধ করলাম🤫

সাবুঃ আচ্ছা ওভাবেই থাক দেখ মন দিয়ে।

সাবু সুই টা ২ আঙুল দিয়ে ধরে আরেক টা হাতের তালু খুলে তুয়াকে দেখালো যে হাতের দুপাশে ফাকা,,এরপর অপর হাতে যে সুই টা ছিলো সেটা হাতের তালুতে ঢুকিয়ে চাপ দিতে লাগলো,,এরপর নিচে থেকে সুই বের করে ফেললো,,,যাদুর মানে টা এমন যে সে হাতে সুই ঢুকিয়েছে কিন্তু হাত না কেটে কোনো ছিদ্র না হয়ে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে সুই,,,এরপর সাবু দুইহাত আবার তুয়া কে দেখালো।

তুয়া হা করে এতোটা মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো যে তার মুখের চকলেট পরে গেছে নিচে সেদিকে খেয়াল ই নেই।

তুয়াঃ কিভাবে করলা এটা😮 দেখি তোমার হাত,,হাত কাটেনাই তো কিভাবে কি করলা😮

সাবুঃ এটাই তো ম্যাজিক 😎 নে চকলেট খা খেয়ে ব্রাশ করে ঘুমা যা😒আমিও ব্রাশ করে আসি গিয়ে ঘুম পাইসে খুব🥱

তুয়াঃ এই সাবুপি শিখাওনা প্লিজ প্লিজ শিখাও আমাকে কিভাবে করলা🥺

সাবুঃ না এসব ম্যাজিক সবাইকে শেখানো যায়না আর সবাই শিখতেও পারেনা তুই বড় হলে শিখিয়ে দিবো এখন😇

তুয়াঃনা শিখাও না প্লিজ🥺

ইভা ঃ আর কত রাত জাগবি তোরা ঘুমা দুজনে😾 তুয়া ব্রাশ ও করিস নি আবার রাতে চকল্বট খাচ্ছিস,এক্ষুনি ব্রাশ করে ঘুমাবি আমি আবার এসে চেক করবো না ঘুমালে কপালে দুঃখ আছে দুজনের😒

ভয়ে দুজনে গেলো ব্রাশ করতে তাড়াতাড়ি ব্রাশ করে এসে ঘুমিয়ে পরলো।

তুয়ার যেনো তর সইছেনা সকাল টা হলেই সাবুকে ধরবে কিভাবে ম্যাজিক শিখলো,, আর কিভাবে ম্যাজিক টা করে,, এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো পিচ্চি দুজন।

এদিকে ইভার মনে এক অজানা ভয়ের আশংকা বাসা বেধেছে, কিছুতেই ঘুম আসছেনা, অনেক টেনশন হচ্ছে যে কেন এমন ভয় লাগছে।

তা দেখে রাসেল আহমেদ বললো," কি হলো ইভা ঘুমাচ্ছোনা যে কাল অফিস আছে হস্পিটালে ও যেতে হবে ঘুমাও তাড়াতাড়ি নাহলে অসুস্থ হয়ে পরবে।"

ইভা, রাসেল কে কিছু একটা বলতে চেয়েও বললোনা,,"আচ্ছা" বলে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।


***

সকালে নাস্তা খেতে বসে,

তুয়াঃ আম্মু আমি কিন্তু হস্পিটালে যাবো সাবুপির সাথে।

ইভাঃ একদম না কালকেই নিয়ে গেছি,,রাস্তায় নামলেই ছুটাছুটি করো তুমি,,তোমাকে আজ নেওয়া যাবেনা, তাছাড়া আজ আমার অফিসে কাজ আছে একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারবোনা।

তুয়াঃ যাই না আম্মু প্লিজ সাবুপি ও তো যাবে।

ইভাঃ তুয়া আমি নিষেধ করেছি মানে যাবেনা।

তুয়াঃ আচ্ছা তাহলে কালকে নিয়ে যাবা অবশ্যই। তাহলে আজ যাবোনা হুহ☹️

ইভাঃ উম🤔 আচ্ছা তবে শর্ত আছে বেশি লাফালাফি করা যাবেনা রাস্তাঘাটে। 😾

তুয়াঃ আচ্ছা করবোনা🥺

[ইভা বের হবে কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে হয়তো এটাই তার মেয়ের করা শেষ আবদার, কিন্তু কেন মনে হচ্ছে এমন? এগুলো কি শুধু ই মনের ভুল? নাকি অন্যকিছু?.... তার খুব ইচ্ছা হচ্ছে মেয়ের আবদার পূরণ করার..... ]

অতঃপর সাবু কে হস্পিটাল এ নামিয়ে দিয়ে ইভা চলতে লাগলো তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।


এদিকে বাসায়,, তুয়া যেতে পারেনি তো কি হয়েছে দাদির সাথে বসে ভিডিও কলে বাবুকে দেখছে,,,

তুয়াঃ এই সাবুপি ভালো করে ধরোনা ফোন টা।

সাবুঃ ধরসি তো দেখছিস না😒

তুয়াঃ সোজা করে ধরো😌

সাবুঃ এএহহ ঢং😒😒

তুয়াঃ দাদি দেখো বাবু টা কেমন পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। ও কি সারাদিনি ঘুমায় নাকি? অলস একদম সাবুর মতো!

দাদিঃ না দাদুমনি বাচ্চাদের চোখ খুলতে সময় লাগে, আর ২/১ দিন বাদে ও চোখ খুলে দেখবে সবাইকে।

তুয়াঃ ওও তাই,, কি সুন্দর করে দেখার চেষ্টা করছে আমাদের গুলুমুলু গাল দুটা কি লাল ফরসা মুখে লাল গাল টা টেনে দিতে ইচ্ছা কত্তেসে,কালকে টেনে আসবো😁 কালো চুল করা এসে কপালে পরসে,,ওর চুল কাটেনি কেনো এখনো দাদি?

দাদিঃ বাসায় এনে কাটবে ছোট বাবু যে তাই এখনো ফেলেনি।

এভাবে কিছুক্ষণ সবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলে টিভির পর্দায় মোটু পাতলু দেখতে বসলো তুয়া। অন্য সময় হলে মোটু পাতলু দেখে তুয়া হেসে কুটি কুটি হয়ে যায়। কিন্তু আজ তো তার চোখ কান মোটু পাতলুর এখানে হলেও মন তো হস্পিটালে বাবুর উপর। খুব উত্তেজিত হয়ে আছে সে কাল হস্পিটালে যাওয়ার জন্য। তুয়ার যেনো আজ সময় কাটছেইনা। কার্টুন দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।

ইভা আর সাবু এসে পরেছে। সাবু এসেই ফ্রেশ হতে গেলো ওমনি তুয়া ব্যস্ত হয়ে পরলো সাবুর ফোনে গেম খেলতে। চার্জ প্রায় শেষের দিকে।।

তুয়াঃ এবাবা চার্জ শেষ এবার তো সাবুপি ধরে পিটাবে ধরে🤦‍♀️

সাবুর পায়ের শব্দ পেয়ে জানানার পর্দার পিছনে লুকিয়ে পরলো তুয়া।

সাবুঃ কিরে চার্জ শেষ করে ফেলে কোথায় লুকিয়েছিস। পর্দার নিচে কার পা রে। বের হয়ে আয় কিছু বলবোনা।

তুয়া চুপ চাপ বের হয়ে এসে কিউট করে একটা স্যরি বলে সাবুর কোলে উঠে পরলো।

তুয়াঃ সাবুপি কালকের ম্যাজিক টা তো শিখালেনা।

সাবুঃ ভাভাগো এখনো মনে আছে সেই কথা।

তুয়াঃ হ্যাঁ আছে তো শিখাও না, শিখাও না আমি কাউকে শেখাবোনা প্রমিজ।

সাবুঃ শিখাবো ২ টা শর্ত আছে।😇

তুয়াঃ কি শর্ত বলো আমি রাজি🥺

সাবুঃ তোর চকলেট থেকে চকলেট দিতে হবে,আর এই ম্যাজিক করা যাবেনা কারণ তুই ছোট এগুলো করলে ব্যথা পারি সুই দিয়ে।

তুয়াঃ আচ্ছা রাজি শিখাও।

সাবুঃ ম্যাজিক টা আসলে এরকম যে,"" একটা সুই যে আঙুলের চামড়া উঠে গেছে এমন একটা আঙুলে ঢুকিয়ে এরপর এমনি আরেকটা হাতে একটু চাপ দিয়ে হাতের তালুতে ঢুকানোর ভং করতে হবে😁 এরপর খুব তাড়াতাড়ি সুই ওয়ালা আঙুলের হাত টা ওই হাতের নিচে নিয়ে সুই বের করার ভান করে বের করতে হবে🤣"

তুয়াঃ 😧😧 এহহহহহ এটাতো চোরা বুদ্ধি,এটাকে ম্যাজিক বলে আবার 😾

সাবুঃ নিজেই তো ম্যাজিক বলে অবাক হয়েছিলি কাল😁পিচ্চি গুলা এতো বোকা,বোকা তুয়া😁

তুয়াঃ এইইইই আমি বোকা না😾 তুমি চোরামি করসো😒


শুরু হলো ঝগড়া😂😁 মিসেস ইভা এসে গতদিনের মতো ঝগড়া থামিয়ে খেতে নিয়ে গেলো,,,আজকে সব তুয়া আর সাবুর ফেভারিট রান্না হয়েছে,,তাদের দুজনের ফেভারিট একি, ডিম, মুরগি আর আলুর তরকারি হলে তাদের আর কিছু লাগেনা😜


খুব মন দিয়ে খেলো দুজন,, খেতে বসে তুয়ার হাজার টা বকবক কাল কখন বাবু দেখতে যাবে,কি করবে সব ভাবনা গুলা বলছে সবাইকে তুয়া। সবাই ও তুয়ার আধো আধো কথা শুনে হাসছে আর খাচ্ছে।

খাওয়া শেষে রোজকার মতো ঘুমাতে গেলো সবাই। সাবুকে কোলবালিশ বানিয়ে ঘুমাচ্ছে তুয়া। শোয়ার একেক টা স্টাইল দেখার মতো। একবার মাথার জায়গায় পা, আরেকবার খাটের শেষ প্রান্তে মাথা।সাবুর তাকে ঠিকভাবে ধরে এনে শোয়াতে শোয়াতে রাত কেটে গেলো।


সকাল বেলা,,,,

দুধ খেতে খেতে তুয়া বললো,
তুয়াঃ দুধ যে কেনো খায়না বড় মানুষ রা,ওদের যে কিসের গন্দ লাগে কে জানে,আমার তো কুব মজা লাগে।[বাচ্চাকালে সবারি মনে হয় মজা লাগে দুধ😁😂] আম্মু আজকে আমি আলু ভাজি দিয়ে রুতি খাবোনা ডিম পোচ দিয়ে খাবো।কাল মরিচ খেয়ে ফেলসিলাম না দেখে।

সাবুঃ হেহে মরিচ খেতে পারেনা।

তুয়াঃ খাচ্ছি বলে বললাম না কিছু,দাদি বলসে খেতে বসে বেশি কথা বলতে নেই😾😾😾

সাবুঃ আমার চেয়ে বেশি কথাতো তুমি বললা।😒😏

তুয়াঃ 🤫🤫🤫🤫😾

ইভাঃ এইযে রাজকন্যা আপনার রুটি আর ডিম ভাজি ২ টা দিসি ২ টার এক টুকরাও যেনো অবশিষ্ট না থাকে,নইলে হস্পিটালে যাওয়া ক্যান্সেল।

তুয়াঃ বাবাহ,খাচ্চি গো খাচ্চি বাচ্চাতার উপরেই অতাচার করো খালি।

সবাই হেসে দিলো তুয়ার কথায়! মিসেস ইভা একমনে দেখছে তার মেয়ের খাওয়া।আস্তে আস্তে কতখানি বড় হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। কেন যে অজানা ভয় টা তেড়ে বেড়াচ্ছে তাকে কে জানে।

খাওয়া শেষে তারা রওনা হলো হস্পিটালে যাওয়ার জন্য, আজকে তুয়া একটুও দুষ্টুমি করলোনা রাস্তায় কারণ আম্মুর বারণ আছে। রাস্তায় একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখে তুয়া বললো,

তুয়াঃ আম্মু ও কাদছে কেন? ওর মা কোথায় ওর মা কি মেরেছে ওকে?

ইভাঃ তোকে কিভাবে বোঝাবো মা, সবার জীবন তো এক রকম হয়না।কার ভাগ্যে কি লেখা আছে তা কেউ বলতে পারেনা এক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া। বাচ্চা টা হয়তো ক্ষুধায় কাদছে হয়তো তার মা ভাগ্যের সাথে লড়াই করে হেরে গেছে। [মনে মনে বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো]

তুয়া ততক্ষণে সাবুর হাত ছেড়ে দৌড়ে গেলো বাচ্চাটার কাছে, বাচ্চাটার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,," তাক কাদেনা কাদেনা"
সাবু ও দৌড় দিলো তুয়ার পিছু পিছু। সাবুর ব্যাগে অনেক রকম কেক বিস্কিট থাকে,, তুয়াকে ২ টা কেকের প্যাকেট দিয়ে বললো,," তোমার বন্ধুকে দেও বুড়ি,ওর ক্ষুধা লেগেছে হয়তো""

তুয়া সুন্দর করে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো,, এরপর হাত দিতে টাটা দিয়ে চলে আসলো,,বাচ্চা টাও মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তাকে টাটা দিলো।


হস্পিটালে এসেই দৌড়ে চলে গেলো খালামনির কেবিনে বাবুকে ওখানে ট্রান্সফার করেছে,, গিয়েই খালামনি কে জড়িয়ে ধরলো তুয়া।

তুয়াঃ এবাবা আমিতো হাত ধুঁতেই ভুলে গেসি,আম্মু জানলে খুব রাগ করবে।

ইভাঃ যাও হাত ধুয়ে আসো তাড়াতাড়ি ওই হাতে বেবির সামনে যাবেনা😒

তুয়াঃ হ্যাঁ ধুয়েছি এবার আম্মু😁বেবিইইইইই তোমার গুলুগুলু গাল টানবো আজ😍

সাবুঃ এইই বুড়ি ও বাবু তো ব্যথা পাবে।

তুয়াঃ ও হ্যাঁ তাইতো,,,মাশা আল্লাহ দেখো বেবির চোখ খুলে গেছে কি সুন্দর করে দেখছে আমাকে। হাই বাবু আমি তোমার বড় আপু এই দেখো।

বাবুকে একটা দোলনায় রাখা হয়েছে তুয়া ধীরে ধীরে দোল দিচ্ছে বাবু কে। নানা রকম গল্প করছে বাবুর সাথে।

সাবুঃ আচ্ছা বাবুর তো নাম রাখতে হবে তাইনা।

সাবুর আম্মুঃ ঠিক করো সবাই মিলে কি নাম রাখা যায় বাবুর।

তুয়াঃ আমি রাখবো আমি রাখবো বাবুর নাম, বাবুর নাম রাখবে তুবা😍আমার সাথে মিলিয়ে🥰

সাবুঃ ওলেবাবা কুব কিউত আচ্ছা তোমার টা রাখবো ডাক নাম হিসেবে। আর আগে কি রাখবো?🤔🤔

সাবুর আম্মুঃ ইফফাত আরা তুবা?🤔

সাবুঃ হ্যাঁ সুন্দর তো😍এটাই ফাইনাল🥰

কথা বলতে বলতে কেবিনের দরজা খোলার আওয়াজ হলো, তুয়ার আম্মু এসেছে তুয়াকে নিয়ে যেতে। মিসেস ইভা সাবুর আম্মুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বাচ্চা কে একটু কোলে নিলো।। সবাইকে বিদায় দিয়ে বাসার পথে রওনা হলো ইভা আর তুয়া। আজ সাবু যাবেনা আজ হস্পিটালে থাকবে।

তুয়াঃ আম্মু জানো বাবুর নাম ইফফাত আরা তুবা রেখে আমার নামের সাথে মিলিয়ে।

ইভাঃ হ্যাঁ তাই তো শুনলাম তুমি নাকি তুবা নাম দিয়েছো।খুব সুন্দর!

আজকে রাস্তায় অনেক জ্যাম,, ড্রাইভার রা যে এতো অসচেতন ট্রাফিক পুলিশদের ও মূল্যই দেয়না। সাধারণ জণগণ এর কথা তো বাদ ই।

তুয়াকে নিয়ে খুব সাবধানেই হাটছেন মিসেস ইভা!তুয়া ও হাত ধরে আছে আম্মুর,আজকে যে শর্ত দিয়েছে আম্মু,একটু ছটফট করছে যতই হোক বাচ্চা মন তো!

অফিস থেকে বসের কল, এই অবস্থায় রাস্তায় ফোন ধরা উচিত নয় তবুও কিছুটা বাধ্য হয়েই ধরতে হলো বসের কল। মিসেস ইভা কথা বলছেন ফোনে কখন যে তুয়া হাত ছেড়ে একটু দূরে তার পরে যাওয়া চকলেট উঠাতে গেলো সেদিকে যেনো তার খেয়াল ই নেই।

হঠাৎ চারিদিকে সবাই চিৎকার করছে একটা ট্রাক কে উদ্দেশ্য করে। মিসেস ইভা খেয়াল করলেন তার আরেক হাত খালি! দ্রুত ই পিছনে ফিরে "তুয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া" বলে চিৎকার করে দৌড়ে গেলেন মিসেস ইভা ,,,
তুয়া চকলেট তুলে উঠে দাড়াতেই কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রাকের নিচে চাপা পরে গেলো তুয়া,,,,মিসেস ইভা কাদতে কাদতে দৌড়ে আসলেন মেয়েকে কোলে তুলে চিৎকার করে কাদতে লাগলেন তার সামনে ভাসছে তার মেয়ের আর্তনাদ "আম্মু আমার ভয় লাগছে আমাকে জড়িয়ে ধরো"

তুয়ার মাথা থেকে রক্ত পরছে বন্যার মতো, তুয়ার রক্তে ভরে গেলো রাস্তার মাঝখানটা, চারপাশে লোক জড়ো হলো, এম্বুল্যান্স এর আওয়াজ শোনা গেলো,,মিসেস ইভা যেন পাথর হয়ে গেছে কিচ্ছু তার কানে যাচ্ছেনা,সে যেনো কিছুই মেনে নিতে পারছেনা,,তুয়া কে হস্পিটালে নেওয়া হলো।

****

আই সি ইউ এর সামনে বসে আছে মিসেস ইভা, তার স্বামী রাসেল এবং তুয়ার দাদি।
তুয়ার দাদি কাদছে। মিসেস ইভার চোখের পানি শুকিয়ে দাগ হয়ে গেছে মুখে।

৩ ঘন্টা পর আইসিইউ এর লাইট অফ হলো বেরিয়ে আসলো ডাক্তার মুখের রঙ যেনো উড়ে গেছে ডাক্তারের। কিভাবে বলবে বাচ্চাটার মা কে?

তুয়ার বাবা দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গেলো,
- ডাক্তার আমার ত....তুয়া? আমার রাজকন্যা কেমন আছে?

ডাক্তার বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে তাদের এমন অবস্থা দেখে,,
- মিস্টার রাসেল।শি ইজ নো মোর!!!!

মিস্টার রাসেল যেনো কোনো কথা পৌছাচ্ছেনা,,গলায় কথা গুলো আটকে গেছে। চোখ টাও যেন আজ বেইমানি করছে,,হয়তো অতিরিক্ত কষ্টে মানুষ এভাবেই পাথর হয়ে যায়। কিছু একটা বুঝতে পেরে রাগে উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারের এপ্রোনের কলার ধরে,

রাসেলঃ এই ডাক্তার কি বলছেন আপনি? আমার তুয়ার কিছু হয়নি,,আপ্নারা কিছুই জানেন না কিছুই পারেন না,আমি আমার তুয়াকে বেস্ট ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবো।আপনাদের হস্পিটালের নামে কেস করবো আমি আপ্নারা কিভাবে ডক্টর হয়েছেন।"আমার তুয়ার কিচ্ছু হয়নাই " বলে তুয়ার কাছে দৌড়ে গেলো,,


ডাক্তারঃ শান্ত হন এই মুহুর্তে আপনাকে শক্ত হতে হবে, আপনার পরিবার কে সামলাতে হবে আপনাকে।

স্বান্তনা দিয়ে ডাক্তার চলে গেলো,,কিন্তু মা বাবার কোল খালি করে না ফেরার দেশে চলে গেলো তুয়া,,,পৃথিবী বুক থেকে মুছে গেলো তুয়ার অস্তিত্ব!


তুয়ার আম্মু কিছুই বলতে পারছেনা,,তার কানে শুধ্য ডাক্তারের ওই কথাটাই প্রতিধ্বনি হচ্ছে বারবার,,"শি ইজ নো মোর"

তুয়ার দাদি কাদতে কাদতে তার ছেলেকে সামলাচ্ছে,তার ও এই সত্যিটা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে !


***
জানা গেছে সেই ট্রাক ড্রাইভার নাকি নেশা করে ট্রাক চালাচ্ছিলো যার জন্য আজ এই পরিণতি। তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

***

সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তুয়ার নিথর দেহ টা। বাড়ির সবাই কাদতে লাগলো। মিসেস ইভা এ পর্যন্ত ৪ বার সেন্সলেস হয়ে গেছে কাদতে কাদতে।কেউ সামলাতে পারছেনা তাকে বাড়ির প্রতিটা কোণায় থাকা তুয়ার স্মৃতিগুলো আকড়ে ধরছে তাকে।

তুয়াকে কবর দেওয়া হলো সবাই স্বান্তনা দিচ্ছে তুয়ার মা বাবা কে।।

সাবু কাদতে কাদতে হিচকি উঠে গেছে তার,, কিভাবে ভুলে যাবে তুয়ার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো!!!





৩ বছর পর,,,,

"এতা কে?"

আধো আধো করে তুবার ছবিতে আঙ্গুল রেখে সাবুকে প্রশ্ন করছে তুবা।


[তুয়া দের বাসায় সবাই আজ ]

সাবুর মন টা খারাপ হয়ে গেলো মনে পরে গেলো ৩ বছর আগের কথা তার একদিকে তুবা হওয়ার আনন্দে খুশির রেখা সবার মুখে আরেকদিকে তুয়া,,,,,,,,,, আর ভাবতে পারছেনা সে

তুবাঃ তাবু কাদছো কেন। তাক কাদেনা কাদেনা আম্মু তকেত দিবে নে।

তুয়ার মা তুবার দিকে তাকিয়ে আছে তার ও চোখ ভিজে যাচ্ছে,তুবার মাঝেই যেন তুয়া কে দেখতে পারছে। আজ ৩ টা বছর হয়ে গেলো কিন্তু এখনো সেই অভিশপ্ত রাতের কথা কাটা দেয় সবার মনে।

তুয়ার দাদি তুয়ার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দিলো,," কেদোনা মা, তুয়ার ও কষ্ট হবে তুমি এভাবে কাদলে,,এটাই দুনিয়ার নিয়ম সবাইকে একদিন যেতে হবে!

মিসেস ইভাঃ হ্যাঁ মা।[চোখের পানি মুছে দীর্ঘশ্বাস ফেলে]

তুবাঃ এবাবা তবাই কাদচে


আজ তুয়া নেই কিন্তু তুবা বাসার সবার মন জমিয়ে রেখেছে, সবাই তুবার মাঝেই যেনো তুয়াকে খুজে পাচ্ছে❤️❤️❤️




[গল্প টা এতোটা স্যাড এন্ডিং না হলেও পারতো,,কিন্তু যখন গল্প টা লিখি তখন আসলে এরকম ই একটা সত্য কাহিনির উপর লিখতে চাইসিলাম,অনেক মন খারাপ হইসিলো ঘটনা টা শুনে🙃আমি এতো ভালো লিখতে পারিনা,জানিনা কতটা ফুটিয়ে তুলতে পারসি,কিন্তু এবার শেষ করলাম কাহিনি টা🙃 স্পেশালি থ্যাংকু মেঘলাপি,ওর জন্যই লিখার আগ্রহ পেয়েছিলাম🥰 কিন্তু এই পর্বটা লিখতে অনেক হাত কাপসে😢]

*




7 Comments 461 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024