FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

শয়তান যেভাবে কুমন্ত্রণা দেয়!!

শয়তান যেভাবে কুমন্ত্রণা দেয়!!

*

ঘটনাটি বারসিসা নামের বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের একজন নেককার ব্যক্তির। জানা যায়, বনি ইসরাইলের লােকেরা যখন পাপের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিল, যখন তাদের আগাগােড়া পাপ আর পঙ্কিলতায় ছেয়ে গিয়েছিল, তখন বিশাল একটি জনপদে কেবল বারসিসাই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল ছিলেন। আরও জানা যায়, তিনি তার প্রার্থনাগৃহে একটানা ৭০ বছর আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন ছিলেন।

একবার বনি ইসরাইলের তিনজন যুবক একটি কাজে শহরের বাইরে যাওয়ার জন্য মনস্থির করল। তাদের ছিল যুবতী এক বােন। পাপ-পঙ্কিলতার এই সময়ে তাদের বােনকে কে দেখে রাখবে—সেই চিন্তায় তারা অস্থির হয়ে উঠল। তখন বনি ইসরাইলের অন্য লােকেরা তাদের পরামর্শ দিয়ে বলল, “পাপাচারের এই অস্থির সময়ে তােমাদের বােনকে দেখে রাখার মতাে, হিফাযতে রাখার মতাে বনি ইসরাইল সমাজে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। তবে বারসিসার কাছে তােমরা তােমাদের বােনকে রেখে যেতে পারাে। আমরা তাকে পাপ থেকে মুক্ত, অন্যায় থেকে দূরে এবং আমাদের মধ্যে সর্বোচ্চ তাকওয়াবান ও পরহেযগার হিসেবে জানি।

তিন ভাই এ রকম একজন আল্লাহওয়ালা লােকের সন্ধান পেয়ে খুব খুশি এবং চিন্তামুক্ত হলাে। বারসিসার কাছে এসে বােনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনুরােধ করল তারা। একজন বেগানা মহিলার দায়িত্ব নেওয়ার কথা শুনেই ভয়ে কেঁপে উঠল বারসিসার অন্তর। তিনি বললেন, ‘চুপ করাে! আমি কখনােই এই দায়িত্ব নিতে পারব না। আল্লাহর দোহাই লাগে, তােমরা এখান থেকে চলে যাও।

বারসিসার এমন কথা শুনে তিন ভাই মনঃক্ষুন্ন হয়ে চলে যাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে শয়তান তার কুমন্ত্রণা নিয়ে হাজির হলাে। সে বারসিসার মনে এমন আবেগ আর দরদি যুক্তি ঢেলে দিল যাতে করে তার হৃদয় সহজেই গলে যায়। বারসিসার মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে শয়তান বলল, বারসিসা, তুমি কী করলে এটা! এই সরল,

মহৎ ভাইগুলাের এমন নিষ্পাপ আবদারকে তুমি প্রত্যাখ্যান করলে? তুমি কি মনে করেছ, তারা কাজের জন্য শহরের বাইরে চলে গেলে তাদের ছােট বােনটা নিরাপদে থাকবে? কেউ তার সন্ত্রমহানি করবে না? তুমি কি মনে করাে না যে, সে তােমার কাছেই সর্বোচ্চ নিরাপদে থাকত?’

শয়তানের পক্ষ থেকে মনে উদয় হওয়া এই প্রশ্নগুলােকে বারসিসা খুব পছন্দ করে ফেলে। তার কাছে এই কথাগুলােকে খুব যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তবিক বলে মনে হলাে। সে ভাবল, ঠিকই তাে! সময় তাে খুব বেশি ভালাে না। তাদের বােন একা থাকলে যে-কারও দ্বারা নির্যাতিতা হতে পারে। তারচেয়ে ভালাে হয়, যদি আমিই এই মেয়েটার দায়িত্ব নিয়ে রাখি। এতে করে সে হয়তাে অন্যদের লালসার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।

বারসিসা ফিরে যাওয়া তিন ভাইকে ডাক দিল। বলল, “ঠিক আছে। আমি তােমাদের বােনের দায়িত্ব নিতে পারি। তবে শর্ত হলাে, সে আমার সাথে আমার প্রার্থনাগৃহে থাকতে পারবে না। দূরে আমার একটি কুঁড়েঘর আছে। সেখানেই তাকে থাকতে হবে।

বারসিসা তাদের বােনের যিম্মাদার হতে রাজি হয়েছে দেখে তিন ভাই-ই খুব খুশি। তারা বারসিসার শর্ত মেনে নিয়ে বােনকে তার কাছে রেখে শহরের বাইরে চলে গেল।

বারসিসা রােজ তার প্রার্থনাগৃহের সামনে মেয়েটির জন্য খাবার রেখে দরজা বন্ধ করে দিত। খাবারের পাত্র বারসিসার ঘরের সামনে থেকে নিয়ে আসত মেয়েটি। এভাবেই পার হচ্ছিল দিন। কিন্তু শয়তানের চক্রান্ত আরও গভীরে। সে আবার বারসিসার মনে কুমন্ত্রণা দিল। শয়তানের কুমন্ত্রণাগুলাে ছিল আপাতদৃষ্টিতে যৌক্তিক ও বাস্তবিক। সে বারসিসার মনে এই ভাবনার উদয় ঘটাল যে, 'বারসিসা! তুমি সবসময় মেয়েটির জন্য ঘরের বাইরে খাবার রাখাে। সে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে তােমার ঘর অবধি হেঁটে এসে সেই খাবারগুলাে নিয়ে যায়। আচ্ছা বারসিসা, একটা ব্যাপার কি খেয়াল করেছ? তােমার ঘর অবধি যখন মেয়েটা হেঁটে আসে, সে সময় না-জানি কত পরপুরুষ তাকে দেখে ফেলে। এটা কি ঠিক, বলাে? তুমি তাে চাইলে তার ঘরের দোরগােড়া পর্যন্ত খাবারগুলাে রেখে আসতে পারাে।

বারসিসার মনে এই ভাবনা দাগ কাটল। সে ভাবল, সত্যিই তাে। আমার ঘর পর্যন্ত আসতে তাকে তাে অনেক পরপুরুষ দেখে ফেলে।

বারসিসা পরের দিন থেকে আর নিজের ঘরের কাছে খাবারপাত্র না রেখে মেয়েটার ঘরের দোরগােড়ায় রেখে আসতে লাগল। এভাবে চলল আরও কিছু দিন। শয়তান তার কূটবুদ্ধি নিয়ে আবার হাজির হলাে। এবার বলল, বারসিসা! ভারি আজব লোেক তাে তুমি! তার ঘরের দোরগােড়া পর্যন্ত যেতে পারাে, ভেতরে গিয়ে তার সাথে দু-চারটে কথা তাে বলতে পারাে, তাই না? বেচারি ভাইদের অনুপস্থিতিতে কতই-না একাকী জীবন পার করছে!

এই ভাবনাও বারসিসার মনঃপুত হলাে। সে ভাবল, সত্যিই তাে! এতদূর পর্যন্ত যখন আসি, তার সাথে দু-চারটে কথা তাে বলে যেতে পারি। ভাইদের অনুপস্থিতিতে সে নিশ্চয় খুব একাকীবােধ করে।

পরের দিন থেকে বারসিসা খাবার নিয়ে সােজা মেয়েটার ঘরের ভেতরে ঢুকতে শুরু করে। দুজনের হালকা কিছু গল্প-আলাপও হয়। সেই আলাপগুলাে আস্তে আস্তে দীর্ঘ আলাপে পরিণত হয় এবং একসময় বারসিসা মেয়েটার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। সেই আসক্তি একটা পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়।১]

বারসিসার গল্পের এখানেই ইতি টেনে দিই। আমরা যারা ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ বলে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে জায়েয মনে করি এবং এতে ক্ষতির কিছু দেখি না বলে থাকি—আমাদের জন্য এই গল্পে ভালাে রকমের শিক্ষা রয়েছে। শয়তান বনি ইসরাইল যুগের সবচেয়ে সেরা দ্বীনদার, তাকওয়াবান, আমলদার আর নেককার বান্দা বারসিসাকে যেভাবে ফাঁদে ফেলেছে, আমাদের যুবসমাজকেও ঠিক একইভাবে শয়তান ফাঁদে ফেলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, ‘দুজন নারী-পুরুষ যখন একান্তে আসে, সেখানে তৃতীয়জন হয় শয়তান।[২]

আমরা যখন নন-মাহরাম কাউকে নিয়ে একান্তে আলাপে মত্ত হই কিংবা একই রিকশায় চেপে যাওয়া-আসা করি, তখন মাঝখানে শয়তান এসে আমাদের বিভ্রান্ত করতে থাকে। আমাদের মনে হতে পারে, আরে! আমার মনে তাে আমার বান্ধবী সম্পর্কে কখনাে খারাপ ধারণা আসে না। আমি তাে কখনাে ওর দিকে খারাপ নজরে তাকাই-ই না। আমরা যারা এমন চিন্তাভাবনা মনে লালন করি, আমাদের উচিত

বারসিসার ঘটনাটি আরেকবার মনােযােগ সহকারে পড়া। শয়তান কিন্তু একটিবারের জন্যও বারসিসাকে বলেনি ওই মেয়েটার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে বরং শয়তান বারসিসাকে যা যা বলেছিল তা আপনার দৃষ্টিতে বাস্তবিক, মানবিক ও যৌক্তিক মনে হতে পারে। শয়তান একবারের জন্যও মেয়েটাকে ফুসলাতে কিংবা তার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকাতে বারসিসাকে উদ্বুদ্ধ করেনি। বরং, শয়তান খুব ভালাে ভালাে কথা বলে বারসিসাকে মেয়েটার কাছাকাছি নিয়ে আসে। এই যে আজকে আমরা বলি, ‘আমি তাে ওর দিকে খারাপ নজরে তাকাই-ই না', 'ওর প্রতি আমার তাে দুর্বলতা নেই' কিংবা ‘আমি তাে ওকে বন্ধু হিশেবেই দেখি কেবল'—এগুলাে সবকিছুই শয়তানের পাতানাে জাল। ফাঁদ। শয়তান আমাদের মনে এই ভাবনার উদয় করে দেয় যে, একজন নন-মাহরামের সাথে বন্ধুত্ব করা, তার সাথে বসে আড্ডা দেওয়া, ঘুরে বেড়ানাে, রিকশায় চেপে আসা-যাওয়া করা, এতে আসলে কোনাে সমস্যা নেই। এগুলাে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। দুজন ছেলে-মেয়ের তাে বন্ধুত্ব হতেই পারে। ভুল। আপনার মাহরাম নয় এমন কারও সাথে বসে আপনি আড্ডা দিতে পারেন না, চ্যাট করতে পারেন না। ফোনে কথা বলতে পারেন না। যার সামনে আপনার জন্য পর্দা ফরয, তার সাথে কীভাবে আপনি হাত ধরাধরি করে হাঁটতে পারেন? যাকে দেখামাত্র আপনার জন্য দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া ফরয, তার সাথে কীভাবে আপনি বন্ধুত্ব পাতাতে পারেন? ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে পারেন? রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করতে পারেন? ফোনে কথা বলতে পারেন?
_____________ক্ষুদ্রাংশ__________
_____________বেলা ফুরাবার আগে____________

*




1 Comments 415 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024