FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

খাবার অপচয় করাই কি এখন ‘স্মার্টনেস’?

খাবার অপচয় করাই কি এখন ‘স্মার্টনেস’?

*

##খাবারের অপচয় যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।##

রাস্তার ধারের ডাস্টবিনগুলোতে প্রতিদিন বহু খাবার জমা হতে দেখা যায়। আপাতদৃষ্টিতে এগুলো আবর্জনা মনে হলেও, কিছু কিছু মানুষের জীবন বাঁচানোর খাবারও বটে। আধুনিকতা প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা রেস্তোরাঁর প্লেটের পুরো খাবারটি শেষ না করেই রেখে দিই, পরে তা চলে যায় ডাস্টবিনে। লোকে ‘আনকালচারড’ ভাববে, এই ভেবে খাবারগুলো অপচয় করি; অর্থাৎ খাবার অপচয় যেন ‘স্মার্টনেস’-এ পরিণত হয়েছে। বাসাবাড়িতেও প্রচুর পরিমাণে খাবারের অপচয় হচ্ছে। ফ্রিজবন্দী খাবারগুলো নষ্ট হলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকগুলো তার বড় প্রমাণ।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে বছরে পরিবারপ্রতি খাবার অপচয় হয় গড়ে ৬৫ কেজি। আর গৃহস্থালি থেকে দেশে প্রতিবছর মোট খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ ১ কোটি ৬ লাখ টন। এ ছাড়া বিয়েবাড়ি বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে প্রচুর খাবারের অপচয় হচ্ছে। জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে গিয়ে লাখ লাখ টাকা অপচয় করে মেহমানদের প্লেটভর্তি আইটেম সাজানো হয়। যার বেশির ভাগই উদ্বৃত্ত থেকে যায়। বর কিংবা বরযাত্রীদের যে পরিমাণ খাবার দিয়ে সমাদর করা হয়, স্মার্টনেসের কবলে পড়ে পুরো খাবারের বেশির ভাগ অংশই নষ্ট করা হয়। ফলে জাঁকজমক বিয়ের অনুষ্ঠান পরিণত হয় খাবার অপচয়ের উৎসবে। অথচ প্রতিবছর পৃথিবীতে যে পরিমাণ খাবারের অপচয় হচ্ছে, তা দিয়ে ৮২ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব, এমনটিই বলছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি মাসে ১০ হাজার শিশু মারা যায় খাদ্যের অভাবে। প্রতিদিন সারা বিশ্বে ৮২ হাজার মানুষ রাতে না খেয়ে ঘুমায়। অথচ বিশ্বে উৎপাদিত খাবারের ১৩০ কোটি টন মানুষ নষ্ট করে, যা মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ।
শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদেও গায়েহলুদ, বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা, আক্দ, কুলখানি ইত্যাদি অনুষ্ঠানে খাবার অপচয়ের দিক থেকে পিছিয়ে নেই। এখন গ্রামের মানুষও তথাকথিত আধুনিকতাকে ধারণ করার পেছনে ছুটছে, আগের মতো আর খাবারের প্লেট চেটেপুটে খায় না। এসব দৃশ্য সমাজের মানুষের কাছে ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। অপচয়কে এখন আর অপচয় মনে হয় না, এ যেন বিলাসিতা। একদিকে খাবার অপচয়ের উৎসব হয়, আর অন্যদিকে গরিব প্রতিবেশীরা খাবারের মিষ্টি ঘ্রাণ শুঁকে এক টুকরা মাংসের অপেক্ষায় থাকে। মানবতার কী নির্মম পরিহাস!

যেটা আমাদের কাছে স্মার্টনেস মনে হচ্ছে, সেটা হয়তো আগামী দিনের পৃথিবীকে ক্ষুধার সাগরে ডুবিয়ে দিতে যথেষ্ট। টাকা থাকলেই যে খাবার পাওয়া যাবে, তা কিন্তু নয়। খাদ্যসংকট দেখা দিলে অঢেল সম্পদের মালিকদেরও না খেয়ে মরতে হবে। এমনও হতে পারে, একটি সময় চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির ফলে মানুষ আর অসুখ-বিসুখে মরবে না, মরবে খাদ্যের অভাবে। তাই যতটুকু খাবার খেতে পারব, ঠিক ততটুকুই নেওয়া উচিত। অতিরিক্ত নিয়ে অপচয় করার চেয়ে, এটা ভালো।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি মাসে ১০ হাজার শিশু মারা যায় খাদ্যের অভাবে। প্রতিদিন সারা বিশ্বে ৮২ হাজার মানুষ রাতে না খেয়ে ঘুমায়। অথচ বিশ্বে উৎপাদিত খাবারের ১৩০ কোটি টন মানুষ নষ্ট করে, যা মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ।

আমাদের ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম চলমান। সরকারের একক প্রচেষ্টায় এ যাত্রায় সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়, প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। অতিরিক্ত খাবার নিয়ে অর্ধেক ডাস্টবিনে না ফেলে না খেয়ে থাকা মানুষগুলোর দিকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সময়ের দাবি। এই শহরের বহু মানুষ এখনো খাবার না পেয়ে আবর্জনা স্তূপ থেকে মাংসের হাড্ডি চুষে খায়। তাই খাবার অপচয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় না করে; বরং তাদের খাবার জোগানে কিছু অর্থ ব্যয় করা প্রয়োজন।

[ Collected ]

*




0 Comments 403 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024