FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

অসমাপ্ত ....

অসমাপ্ত ....

*

গল্পটা কিছুদিন আগে লিখেছিলাম।

শিশিরের অনেকদিন যাবৎ প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। তার বাসার কাওকেই জানাই নি এই বিষয়ে। তো সেদিন কাওকে না জানিয়েই ব্রেইন এর কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করায়। রিপোর্ট আসলো ব্রেইন ক্যান্সার। আর অবস্থা এতোটাই খারাপ যে ডাক্তার বলেই ফেললো, সময় হয়তো আর খুব বেশি নেই। শিশির মন খারাপ করে বাসায় চলে গেলো কিন্তু বাসার কাউকেই জানালো না তার ব্রেইন ক্যান্সার এর কথা।

সব সময় কেমন যেন ঝাপসা মনে হয়। রাত ১ টা বাজে,,শিশির চিন্তা করলো কাওকে বলে কি হবে তার ক্যান্সার এর কথা। তাকে তো চলে যেতেই হবে।কপালে থাকলে ক্যান্সার ব্যতীত অন্য রোগেও আগেও মরতে পারে। শিশিরের বয়স মাত্র ১৮। পরের বছর ইন্টার পরীক্ষা দেবে।

কিন্তু কিছুদিন আগেও শিশির ভাবতো,
ভালো একটা জায়গায় পড়বে,,বিসিএস দিয়ে একটা সরকারি চাকরি করবে। তারপর বিয়ে করবে,বাচ্চা হবে। গাড়ি করবে,বাড়ি করবে।
প্রতিযোগিতা আর প্রতিযোগিতা ছিলো শিশিরের মনে সব সময়। কখনোই ভাবে নি মৃত্যু বলে একটা জিনিস আছে যেটা যেকোন সময় আসতে পারে। সব চেয়ে বড় সত্য এই মৃত্যু তবে মৃত্যু টাকে সবাই অনেক ভয় পায়। তাই ভুলে থাকতেও চায় সবাই।

শিশির অনেক একা একটা ছেলে,,তেমন বন্ধু নাই। অবসর সময় কাটে তার গান শুনে,গল্প পড়ে আর অনেক কিছু চিন্তা করে। মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে তার ভিতর ভীতি থাকলেও প্রস্তুতি কখনো সেইভাবে নেই নি।

তবে আজ তার মনে হচ্ছে এতোদিন শুধু প্রতিযোগিতার সমাজে এই সমাজকেই খুশি করতে চেয়েছে।আপন মানুষদের খুশি করতে চেয়েছে। কিন্তু চিরন্তন সত্য এই যে সে যাদের খুশি করতে চেয়েছে তারা কেউই মৃত্যুর পর তাদের সাথে যাবে না। সে নিজের সুখ সব সময় বিসর্জন দিয়েছে।কখনো আল্লাহকে খুশি করার কথা তার তেমন একটা মাথায় আসে নি,যতটা সে প্রতিযোগিতা নিয়ে ভেবেছে।তার মনে হলো সমাজকে,আত্মীয় স্বজনকে খুশি করা খারাপ কিছু না কিন্তু সে এইগুলাকে সৃষ্টিকর্তার ঊর্ধ্বে গুরুত্ব দিয়েছে যেটা অবশ্যই খারাপ।

কিছুক্ষণ পর চিন্তা করলো এখনো তো সে বেচে আছে। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল,, সব কিছু ভুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে যাবে। মনে মনে ভাবলো তার সময় বেশি নাই,যতটুকু আছে সে তার সর্বোচ্চ টা দিয়ে আখিরাত এর প্রস্তুতি নেবে।

কিছুদিন পর........

শিশির এর জীবনে এখন অনেক পরিবর্তন। সম্পূর্ণ ইসলাম এর দৃষ্টিতে তার জীবন চলছে। সে জীবনে কখনো সুখী হয় নি,,কারণ দুনিয়ার পিছনে ছুটে কখনো প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় না। কিন্তু ইদানিং সে ক্যান্সারের মতো রোগ নিয়েও অনেক সুখী।


ঐদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। শিশিরের মনে হলো এই দিনটা উপভোগ করতে হবে তাকে। যোহরের নামাজ পড়েই তাই বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। আজকে কেন জানি তার অন্যদিনের চেয়ে বেশি মাথা ব্যথা করছে,, ঝাপসা হয়ে আসছে সব কিছু। তারপর ও তার ভিতর একটা জেদ কাজ করলো আজকের দিনটা তাকে বাচার মতো বাঁচতেই হবে। তার তো হারানোর কিছু নেই।
সে রেইল স্টেশনে গেলো। তারপর ট্রেনের টিকেট কেটে অজানা এক গন্তব্যে লম্বা একটা জার্নি করলো। সে যেখানে এসে থেমেছে এর আগে কখনো আসে নি।

এখানকার কিছু সে চেনে না।
মনে মনে ভাবলো এতো সুন্দর আকাশ দেখছে সে,,চারিদিকে কত সুন্দর সুন্দর গাছপালা। হালকা হালকা বৃষ্টি। কত সুন্দর একটা পরিবেশ। শারীরিক এতো কষ্ট থাকা সত্ত্বেও আজ তার মনে হচ্ছে সে যেন পৃথিবীর স্বর্গে অবস্থান করেছে।
অথচ এতোদিন শারীরিক ভাবে সুস্থ থেকেও সে পৃথিবীর কিছুই উপভোগ করে নি।

এশার নামাজ শেষে সে এই শহরটার প্রতিটি রাস্তায় তার পায়ের চিহ্ন রাখার একটা চেষ্টা করছে। আকাশের পানে তাকাচ্ছে আর ভাবছে কত সুন্দর এ পৃথিবী। সে আজ উপলব্ধি করছে পৃথিবীতে কেউ কারো না। হয়তো ক্ষণিকের জন্য কেউ কেউ আপন হয় আবার পর ও। দিনশেষে নিজের জীবন নিজেরই। সে আজ নিজেকে এতো বেশি ভালোবাসে। ক্যান্সার হওয়ার পর কারো সহানুভূতির প্রয়োজন হয় নি। কারণ নিজেকে নিজে ভালোবাসতে পারলে ক্যান্সার এর থেকে কষ্টকর অনুভূতি নিয়েও ভালো থাকা যায়।

হাটতে হাটিতে রাত প্রায় ১২ টা হয়ে গেলো। তার ভিতর কোন ভয় ও কাজ করছে না। বৃষ্টি এতো জোরে হচ্ছে যেন তার মনে হচ্ছে সারাজীবন এর বৃষ্টি একসাথে হচ্ছে।কাল আবার শুক্রবার,, ভালো একটা দিন। রাত যখন ১২ টা বাজলো শিশির এর শরীর অবশ হয়ে আসলো,,কিছুক্ষণ পর
তার নিঃশ্বাস ও থেমে গেলো।................

*




4 Comments 488 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024