সকাল ৮ঃ১৫..
২৬-০৫-২১
রুমে ঢুকতেই নাইট শিফট এর আপা এগিয়ে আসলেন, বুঝাই যাচ্ছিলো রাতে খুব প্যারা গিয়েছে, বসতে না বসতেই মুখস্থ হ্যান্ডওভার বলে যাচ্ছিলেন.. মিনা পেশেন্ট বলতেই থামলেন আর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন, বুঝতেই পারলাম এই পেশেন্ট ই প্যারা দিয়েছে..
আপা এই মীনা পেশেন্ট এর হাজবেন্ড এডভোকেট, তিনি প্রাইভেট ভার্সিটির লাইব্রেরিয়ান, তার ভাবী এডভোকেট, কেউ পুলিশ, কেউ রিপোর্টার, এর সাথে কেয়ার ফুলি ডিল কইরেন.. কিছুই বললাম না আমি, তারপর রাতে তারা ভর্তি হয়ে চলে গিয়েছিলেন আবার ভোর না হতেই ব্যাক করেন, আর এই যাওয়া আসার পথেই সব কাগজ পত্র হারিয়ে ফেলেছে, তারমানে তাকে আবার সব টেস্ট করতে হবে আর আজ সরকারি ছুটি, এতটুকু বুঝা হয়ে গেলো আজ আমার জন্য ও প্যারা অপেক্ষা করছে..
গাইনী কনসাল্টেন্ট সেই রাগ তাকে দেখেই, সব প্রগ্রেস নরমাল, সো মুন আপ্নারা এর নরমাল ডেলিভারি ই করাবেন.. আরো হতাশায় পরে গেলাম.. এক এক সব প্রসিডিউর শেষ করলাম, পেশেন্ট এর পেইন বাড়ছে আর তার উত্তেজনা পরিবার এ বাজে ব্যবহার চলছেই.. পেশেন্ট আর ডক্টর এর মাঝখানে আমি.. ২ সিজার চলছে আগামী ৪ ঘন্টায় তার সিজার ও হবে না..
পেশেন্ট এর জা এসেই আবার রাগ করা শুরু করলেন, আমার বেবী মারা গেছে অপেক্ষা করে ওকে সিজার করান এক্ষুনি, মনে মনে ভাবসিলাম হেন তেন তাইলে আবার গভঃ হসপিটাল এ কি করে এর তো ধানমন্ডি ল্যাব এইডে থাকার কথা.. সকল বাধা প্রতিকূলতা পেড়িয়ে দুপুর ১২ টায় নরমাল ডেলিভারি করাতে সক্ষম হই, আর মহিলার রেস্পন্স এর অভাবে বাচ্চা টা একটু খারাপ হয়ে যায়.. কান্না করেনা, শিশু ডক্টর কল দেই, উফফ.. দুয়া পড়ছিলাম, বেবী টা যেনো বেচে যায়, নয়তো পত্রিকা + সেন্ট্রাল জেল এ থাকতাম এতক্ষনে...
সবকিছু শেষ এ, যখন এক এর পর আমার কাছে মাফ চাইতে আসছিলো আমার হাসি পাচ্ছিলো, বাহিরের কান্ট্রি তে লাস্ট চেস্টা অব্দি করে সিজার না করানোর, আমাদের দেশে লাস্ট চেস্টা চালিয়ে যায় সিজার করানোর আত্নীয় রা ও উদ্ভুদ্ধ করে এতে..
পেশেন্ট এর বয়স ২৮, ফার্স্ট বেবী, বাট তার কর্মকাণ্ড ছিলো ১৫ বছরের একটি মা হওয়ার মত.. সে আমার কাছে ১৫-২০ বার মাফ চেয়েছে.. যখন আমার হাত ধরে একটি মা আর একটি শিশু সুস্থ ভাবে শ্বাস নেয় কোনো রাগ ই থাকেনা... প্রতিটি সাক্সেস এর পরেই কেউ বা মিস্টি কেউ বা টাকার অফার করে যান....
ফ্রেন্ড সার্কেল, প্রতিবেশী রিলেটিভ ভাবেন যা স্যালারি তার থেকে ডাবল এক্সট্রা ইনকাম, বাট জ্বব এর শুরুতেই আম্মু বলছিলো, আমার সখ জাস্ট তুমি গভঃ জ্বব করবা, টাকার দরকার নেই, গভঃ হসপিটাল এ সবচেয়ে নিন্ম স্তর এর মানুষ আসে সেবা নিতে, পারলে তাদের উলটা হেল করবা.. আজ অব্দি ২ টাকা ও নেইনি কারো কাছ থেকে.. এইভাবেই সৎ থেকে বাকি জীবন পার করতে চাই 😇😇😇