FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

ভানগড় রহস্য(১) & (২)

ভানগড় রহস্য(১) & (২)

*

কলকাতা শহরে কিংবা পাহাড়ি পাইন বনের অন্দরে আবার কখনো বা সুন্দরবনের শতাব্দী প্রাচীন রাজবংশের ইতিহাসের পাতায় । আমরা ভূত খুঁজে চলেছি আপনাদের সঙ্গে নিয়ে । আজ বরং পারি দেওয়া যাক রাজ্যের বাইরে কোথাও । হ্যাঁ, আজ আপনাকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছি যেখানকার গল্প বাংলায় এই প্রথম শুনবেন আপনি । তবে এই গল্পটিও বেশ বড় এবং একই সঙ্গে এর কয়েকটি আলাদা আলাদা ছোট গল্পও রয়েছে । তাই এটিও আমাদের কয়েকটি পর্বে ভেঙে ভেঙে আপনাকে শোনাতে হচ্ছে । তাহলে চলুন শুরু করি ! ) :)



| ভানগড় দূর্গ রহস্য |

প্ৰথম পর্ব

ভানগড়, রাজস্থান, ২০১০

‘ The Tribune Chronical ‘ পত্রিকার সাংবাদিক তরুণ গৌর তখন বেশ কিছুদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন । তারপর একদিন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মিঃ ভোরা-কে জানাতেই তিনি বিষয়টি নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসলেন । বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা চলার পর দুজনে স্থির করলেন এই বিষয়টি নিয়ে একটা মিডিয়া কভারেজ করা যেতেই পারে । অনুমতি পাবার পর থেকেই মিঃ গৌর বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করতে লাগলেন কারণ আজ তিনি সেই জায়গাটার সত্য উদ্ঘাটন করতে যাচ্ছেন, যা হয়তো আগে কেউ করার সাহসই পায়নি ।

পরের দিন সকাল সাতটা । ড্রাইভার রাম সিংকে আগেই বলা ছিল । সময়-জ্ঞানও তার বেশ আছে । তাই সময়ে হাজির দিয়ে মিঃ গৌরকে বললেন – ‘আজ কাহা জানা হে সাব ? ‘ । মিঃ গৌর জুতার ফিতেটা বাঁধছিলেন । মুখ না তুলেই উত্তর দিলেন – ‘ ভুতো কা শাহের, ভানগড় ‘ ।

রাজস্থানের আলোয়ার জেলায় অবস্থিত ভানগড় প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো একটি শহর । আর এই শহরের ইতিহাস ঘাটতে গেলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসের পাতায় । ফিরে যেতে হবে প্রাচীন রাজস্থানের রাজপুত বংশের সেই দিনগুলোতে । কিন্তুু বহু শতাব্দী পার করে সেই সব ইতিহাস আজ এক অজানা আতঙ্কের ভয়ে ঢেকে আছে । তাই শেষ পাঁচ শতাব্দী ধরে এই বিশেষ জায়গাটির পরিচিতি ‘ ভুতো কা শাহের ‘ নামেই । যেখানে সরকারি নির্দেশে সূর্যাস্তের ঠিক পূর্বেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় লোকচলাচল । বিশাল প্রাচীন দূর্গের সদরে ঝুলে যায় মস্ত তালা । কারণ ভারতের একমাত্র Legally hunted জায়গাটিতে এই নির্দেশিকাই জারি করেছে কেন্দ্র সরকার । কিন্তুু কেন ?

ভানগড় ঢোকার কিছু পূর্বেই পড়ে ‘ গোলা-কা-বাস ‘ নামে আরেকটি গ্রাম । গ্রামের যে প্রান্তটি ভানগড় কেল্লার সবচেয়ে কাছে অবস্থিত সেই জায়গাটি অদ্ভূতভাবে ফাঁকা । খালি মাঠের মাঝে দু-একটি ইটের জীর্ণ প্রাচীর অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে । একদিকটায় গ্রামের লোকজন গরু -বাছুর নিয়েও খুব একটা ঘেঁসেনা । শূন্য মাঠে দাঁড়িয়ে কথা বললে যেন নিজের নিঃসঙ্গ উপস্থিতিটাই বেশ চড়াভাবে বোঝা যায় । কিন্তুু এই উর্বর জমিতে কেন এই ফাঁকা ধূ ধূ নীরবতা ? তবে কোন অজানা আতঙ্কে ? না সে আতঙ্ক সকলেরই জানা তাই এই জায়গাটি এড়িয়ে চলা ।
মিঃ গৌরের কৌতুহল যে আগের আরো দ্বিগুণ হয়ে গেছে । তিনি দ্রুত পা চালিয়ে গ্রামের একদম ভেতরে ঢুকে গেলেন । কিছুটা এগিয়ে যেতেই দু-তিনজনকে পাওয়া গেল । তারা ভাগাভাগি করে মিঃ গৌরকে গল্পটা শোনালেন । গ্রামের মানুষ, নিরস সাহিত্য আর ছড়ানো ইতিহাসের তথ্যমালায় তারা যেটুকু পরিবেশন করলেন, তাতে মিঃ গৌর তাদের আতঙ্কের কারণ সম্পর্কে কিছুটা আভাস পেলেন । তবে তার কাছে বেশীর ভাগটাই হাস্যকর মনে হল । একজন তো বললেন তিনি নাকি একদিন রাতে সেখানে অদৃশ্য কারোর থাপ্পড় খেয়েছিলেন । আবার অপরজন বললেন, তাদের গ্রামেরই একজনকে নাকি একবার এক অশরীরী গলা টিপে ধরেছিল । তারা এও বললেন, সেই দূর্গে নাকি কেউ কেউ বাজি ধরে রাত কাটবে বলে গেছিলেন কিন্তু তারা নাকি আর ফিরেনি । এই রকম আরো কত কি ! কিন্তু এসবের মধ্যেও মিঃ গৌর একবারও তার ধৈর্য হারিয়ে চলে আসেননি । তিনি তাদের প্রতিটি কথা মন দিয়ে শুনছিলেন । তাদের কথার মাঝে এটা-সেটা প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন । তিনি যেন কিছু খুঁজছেন । মূর্খ গ্রামবাসীদের নিরস কথার মাঝেই, খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার মতোই ।
মিঃ গৌরের ইতিহাস সম্পর্কে বেশ খানিকটা পড়াশোনা আছে । এখনো সু্যোগ পেলেই লাইব্রেরী থেকে বই এনে পড়ে ফেলেন । তিনি এখন সেই ইতিহাসের মই-এ চড়েই মূল ঘটনায় নাগাল পেতে চাইছেন । তিনি এটা মানেন যে, কোন একটি জায়াগা কখনই randomly ভুতুড়ে হতে পারেনা । তার পিছনে অবশ্যই কোন ইতিহাস থাকে বা ঘটনা থাকে যা মূল ইতিহাস থেকে বিচ্যুত হয়ে লোকনিরুক্তিতে পরিনত হয় । তাই তার সামনে এখন দুটো কাজ – এক, তার পাওয়া গ্রামবাসীদের এই নিরস তথ্যে ইতিহাসের সঞ্জিবনী মন্ত্র পড়ে পুরো ঘটনাটিকে একটা সাকার রূপ দেওয়া এবং দুই, নিজের চোখে পুরো বিষয়টি সরজমিনে অনুসন্ধান করা, অর্থাৎ ভারতের সবচেয়ে ভুতুড়ে জায়াগাটিতে সরকারী অনুমোদনে একরাত কাটানো … ।

দ্বিতীয় পর্ব

ভানগড় , রাজস্থান , ২০১০

‘ আপনি কি সত্যিই ওই কেল্লায় রাত কাটাবেন ভাবছেন ? ‘-কপালে ভ্রুকুটি অ্যারকিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিওনাল অফিসার সহায়-এর । তিনিই বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন এই প্রাচীন কেল্লার রক্ষনাবেক্ষনের ।উপর মহলে চিঠি পাঠিয়ে অনুমতি জোগাড় করতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি মিঃ গৌরকে । সেটার কৃতিত্ব অবশ্য অনেকটা যায় ‘ The Tribure Chronical ‘ পত্রিকার সম্পাদক মিঃ ভোরার উপর । তিনিই ব্যাপারটা বেশ সহজভাবে করে দিয়েছেন । আসলে এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রথম থেকে তিনিও যে উৎসাহ দেখিয়েছেন, সেটাই মিঃ গৌরকে কাজে নতুন করে প্রেরণা জুগিয়েছে । কিন্তু সবাইতো আর এসব বিষয়ে বিশেষ উৎসাহি হয়না- যেমন এই সামনের মানুষটি – মিঃ ধনঞ্জয় সহায় । মিঃ গৌরের এই নৈশ অভিযানটি যে তিনি কিছুতেই সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না, তা তার কথাতেই স্পষ্ট । তাই বোধহয় বিংশ শতাব্দীর শিক্ষিত মানুষ হয়েও তিনি বলে বসলেন – ‘ ভূত -টূত আপনি বিশেষ মানেন না বোধহয় । জানি আপনি বেশ সাহসী সাংবাদিক । মুম্বাই-এ একটা ক্রিমিনাল গ্যাং -এর সন্ধান দিয়ে তাদের ধরিয়ে দিয়েছিলেন পুলিশকে । কিন্তু কি জানেন মিঃ গৌর ; ভূত হচ্ছে মানুষেরও বারা । মানুষকে না হয় গুলি টুলি ছুড়ে সায়েস্তা করা যায়, কিন্তু ভূত -কে আপনি কি করবেন মিঃ গৌর ? সে যে অশরীরী – প্রেত ! ‘

মিঃ গৌর আগাগোড়ায় এসব বিষয়ে উদাসীন । তিনি দুটো সিগারেট পুড়িয়ে তৃতীয়টা ধরিয়ে একটা রিং ছেড়ে বললেন – ‘ কি জানেন মিঃ সহায় , আমি আবার উল্টো থিওরিতে বিশ্বাসী । আমার কাছে ভূত-টাই সোজা । বরং ভবিষ্যতেটাই আবছা । সেটা এগিয়ে গিয়ে তলিয়ে না দেখলে আবার আমার চলে না । তাই ওই কেল্লায় ভূত যদি থেকেও থাকে , তার একটা এক্সক্লুসিভ কভারেজ যে আমায় করতেই হবে । তাই অভিযান final । লক্ষ্য – স্থির । Destination – ‘ India ‘s most haunted place – Bhangarh Fort ‘ ।

সকাল নটায় গাড়ি এসে ওয়েট করার কথা । চাকর তিওয়ারিকে বলা আছে ব্রেক ফাস্টের জন্য । সঙ্গে দুপুরের লাঞ্চটাও প্যাক করে নেবেন ভেবে রেখেছেন মিঃ গৌর । প্রয়োজনের তালিকা মিলিয়ে সেগুলো ব্যাগে ভরেছেন কিনা একবার মিলিয়ে নেওয়া দরকার । রাতের অভিযানের জন্য পাশের ফ্ল্যাটের পাকরাশীর কাছ থেকে তার পাঁচ সেলের টর্চটা আজকের জন্য চেয়ে রেখেছেন । অবশ্য তার জন্য তাকে আগাম একশো টাকা জমা রাখতে হয়েছে । পাকরাশী প্রথমে এমনিই দিচ্ছিলেন টর্চটা কিন্তু যখনই শুনলেন – ‘ তিনি ভানগড় অভিযান করছেন, তখনই তিনি টর্চের ইন্সিওরেন্সটা করিয়ে রাখারই জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন । ‘ চাকর তেওয়ারীও মিনমিনিয়ে দু’বার নিষেধ করেছিলেন বটে, তবে মিঃ গৌরের চোখ পাকানোয় সেটা অার এগোয়নি । তিনি মনে করেন- ভারতবর্ষের মানুষজন এসব ব্যাপারে বড্ড ভীতু আর কুসংস্কারাছন্ন । আর সেই জন্যই অচিরেই ভানগড়ের মতো জায়গা হন্টেড হয়ে ওঠে । এসব স্থানীয়দের মনের ভুল কিংবা ম্যাস হিস্টিরিয়া আর ছাড়া কিছুই নয় ।’ তাই তার উচিত ভানগড় এই ভৌতিক তত্ত্বের পিছনে লুকিয়ে থাকা আসল সত্যিটা সকলের সামনে তুলে ধরা । আর তা তিনি করবেনই ।
গ্রীষ্মের সকালে ধূসর পাহাড়ের ন্যাড়া রাস্তা বেয়ে গাড়ি এখন কেল্লার কাছাকাছি এসে থামল। তখন সূর্য ঠিক মাথার উপর, অর্থাৎ ১২টা । কেল্লায় প্রবেশের রাস্তায় শেষ দোকানটি পেরিয়ে আসতেই মিঃ গৌর জায়গাটির অস্বাভাবিক নিঃস্তব্ধতা টের পেলেন । যতদূর চোখ যায় ধূসর পাহাড়ের সারি । তার মাঝখান দিয়ে কখনো এঁকে বেঁকে চলে গেছে রাস্তা, আর সেই পাহাড়েরই কোলে একটা প্রাচীন নগরের কঙ্কালসার অবশিষ্টাংশ । তিনি দূরে দাঁড়িয়েই যেন একটা ভ্যাপসা গন্ধ পেলেন । প্রাচীন ইতিহাসের গন্ধ । পুরোনো বইয়ের পাতার মতো । তিনি গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে যেতেই একজন বছর তিরিশের বেঁটে লোক তার দিকে এগিয়ে এলেন । তার গায়ের রং চাপা, তামাটে ধরনের, রোদে পুড়ে যা হয় আরকি । এগিয়ে এসে নিজের পরিচয় জানিয়ে বললেন – ‘ তিনি জগজিৎ মিঃ সহায় তাকেই পাঠিয়েছেন মিঃ গৌরের সাথে এই নৈশ্য অভিযানের জন্য । মিঃ গৌর করমর্দন করলেন ।

‘ আচ্ছা, রাতের খাবার ব্যবস্থা কোথায় হচ্ছে? ‘ প্রশ্ন করলেন মিঃ গৌর । উত্তরে জগজিৎ জানালো তার বাড়ি থেকেই তিনি বাজরার রুটি আর মাটন কষা আনিয়ে দেবেন । দু-তিন বোতল জল তিনি নিজেই ক্যারি করে এনেছেন মিঃ গৌর । জগজিৎ এর হাতে একটা বিসরালির বোতল দেখে তিনি আশ্বস্ত হলেন জলের সমস্যা হবে না ।

তারা এগিয়ে গেট দিয়ে ঢুকতেই ডানদিকে পড়ল একটা হুনুমান মন্দির । মিঃ গৌর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একটা ছোট্ট নমস্কার করে এগিয়ে গেল । ভূতের পাশাপাশি ঠাকুর-দেবতার ব্যাপারেও তিনি একজন বেজায় নাস্তিক , তবু আজ যেন, তার হাত দুটো আপনা হতেই জড়ো হয়ে গেল নমস্কারের ভঙ্গিতে । হয়তো সামনের কোনো অজানা বিপদের আশঙ্কাতেই তা হয়ে থাকবে । কিছুটা এগিয়েই তার চোখে পড়ল ASI (Archaeological Survey of India) এর একটি পথ নির্দেশিকা । তাতে লেখা — Guide map-‘ Ancient site (Bhangar )’ । পুরোনো টিনের বোর্ডে আঁকা এই ম্যাপ দেখলে সত্যিই প্রথমটায় চোখে ধাঁধিঁয়ে যায় । ধূসর পাহাড়ের কোলে প্রাচীন সভ্যতার এই নির্দশনের বিস্তৃতি যে এতটা হতে পারে তা প্রথমটায় অনুমান করা কঠিন । দিকনির্দেশ আঁকা বাঁকা পথে পাহাড়ের কোলে বেয়ে যেন চূড়া উঠেছে। আর সেই পথের পাশেই একে একে ছড়িয়ে ৫০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাসের অবক্ষেপ, বিশেষ বিশেষ জায়গায় কিছু নামও রয়েছে, যেমন – জহুরি বাজার, গনেশ টেমপেল, গোপীনাথ টেমপেল, পুরোহিত কে হাবেলী, এবং একদম শীর্ষে জ্বলজ্বল করছে তাদের আল্টেমট ডেস্টিনেশন – ‘ দ্য রয়েল প্যালেস ‘ অর্থাৎ সেই অভিশপ্ত ভানগড় দূর্গ । মিঃ গৌর বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন ম্যাপটার সামনে । তিনি মনে মনে সেটা মুখস্থ করে নেবার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, সেটা মাঝে মাঝে তার বিড়বিড়ানি দেখেই বোঝা যায় ।

‘ পুরো ঘুরে দেখতে কতক্ষণ লাগবে? ‘ – প্রশ্নটা এরই মাঝে করেছেন মিঃ গৌর ।

‘ তা ধরুন দেড়-দু ঘন্টা । অবশ্য নরম্যাল টুরিস্ট হলে এক ঘন্টার মধ্যেই ঘুরিয়ে দেখানো যায়, তবে আপনি তো দলে পড়েন না ।’ -মুখে হাসি জগজিৎ-এর । মিঃ গৌরও একপেশে একটা হাসি এনে গলাটা খাঁকরালেন । জগজিৎ-র মধ্যে আর যাই হোক উৎসাহের কমতি নেই । তিনি প্রথমটায় অবশ্য তাকেই মিঃ সহায়ের দলেই ধরেছিলেন ।এবার তাকে সে ধারনা বদলাতে হবে ।

জগজিৎ মিঃ গৌরের সামনে সামনে চলেছে । বিশেষ বিশেষ জায়গায় হাত দেখিয়ে তার নাম এবং সাথে তার ইতিহাস সম্পর্কে ছোট্ট খাটো এক-একটা টীকা-টিপ্পনী জুড়ে দিচ্ছে।

‘ দূরে ওই ভাঙা ইটের দেওয়ালগুলো দেখছেন, ওগুলো দেখে অনুমান করা যায়, ওখানে কোনো এক সময়ে বিশাল শহর ছিল । প্রায় দেড়-দু হাজার লোকের বসবাস ছিল । বাড়ি-ঘর প্রাসাদ বাজার সব ছিল । আর আজ দেখুন সময় কিভাবে একের পর এক ইঁটের ঘুন ধরিয়ে শেষ করে দিচ্ছে শতাব্দীর ইতিহাসকে । Times winged chariot hurrying near… চলুন এগোই । ‘

মিঃ গৌর হাঁটতে হাঁটতে বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছেন । তার মনের মধ্যে অতীত -বর্তমানের এক প্রবল দ্বন্দ্ব চলছে, সেটার ছাপ তার মুখেও । মাঝেমধ্যেই বিড়বিড় করে বলেছেন – ‘Time will destroy everything ‘ ।

সত্যিই… । শহরের এই কঙ্কালসার মৃতদেহের বুকের উপর দিয়ে হেঁটে চলে গেলে যেন মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় ইতিহাস বইয়ে পড়া বীর যোদ্ধা রাজপুতদের কথা । মেবার রাজবংশের কথা, চিতের দূর্গের কথা, মহারানা প্রতাপ সিং, উদয় সিং কিংবা রতন সিং এর কথা । ৫০০ বছর আগে ফিরে তাকালে হয়তো এই শহরের বুকে ঘোড়ায় কিংবা রথে চড়ে যুদ্ধে বেরিয়েছেন তারা আর চোখ খুললেই, সে সব শুধুই শুকনো ইটের পাঁজরে জমে থাকা ধূলো কিংবা বইয়ের পাতার কয়েকটা লাইন – স্কুলের ইতিহাস পরিক্ষার দশ নম্বরের বড় প্রশ্ন । (সংগৃহীত) (চলবে)

*




0 Comments 497 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024