FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

ডনি ডার্কো (২০০১) রিভিউ অ্যান্ড এক্সপ্লেনেশন

ডনি ডার্কো (২০০১) রিভিউ অ্যান্ড এক্সপ্লেনেশন

*

মাথা চুলকানো সিনেমার মাঝে প্রথম দিকে রাখবো ডনি ডার্কোকে। মোটের উপর দেখলে এ’কে টাইম ট্রাভেল আর মাল্টিপল ইউনিভার্স বা অল্টারনেট ইউনিভার্স নিয়ে বানানো সাইন্স ফিকশন বলে চালিয়ে দেয়া যেতে পারে। হ্যাঁ, মূল থিম এ দুটো। তা সত্ত্বেও, মুভি জুড়ে বেশ কিছু ভিন্ন বিষয় খেয়াল করা যায়। ব্যক্তিভেদে উপলব্ধি ভিন্ন হতে পারে, ডিরেক্টর তেমনটাই চেয়েছিলেন হয়ত। ডনি ডার্কোর স্টোরিটাও কিছুটা অস্পষ্ট এবং জটিল, কারণ সিনেমা নিজস্ব লজিকের উপর ভিত্তি করে। প্রচুর ঘটনার কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বাস্তবে পাওয়া যাবে না।
শুরুতে আমরা দেখতে পাই প্রধান চরিত্র ডনি ডার্কোর (Jake Gyllenhall) স্লিপওয়াকিং’এর অভ্যেস আছে এবং প্রায় রাতেই সে ঘুমের মধ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কাহিনী এগোলে আমরা মোটামুটি বেশ সুখি একটা পরিবারের দেখা পাই। ডিনার টেবিলে পরিচিত হই ডনির বাবা-মা আর দু বোনের সাথে।স্বাভাবিক জীবনযাপনের গল্প বিশাল মোড় নেয় মধ্যরাতে ডনির বেডরুমে প্লেনের ইঞ্জিন ধ্বসে পড়ায়। কোত্থেকে এলো এই ইঞ্জিন? - সম্ভবত মুভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গুলোর একটা। সৌভাগ্যবশত ডনি বেচে যায় স্লিপওয়াকিং এ ব্যস্ত থাকায় এবং তখনই মুভির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ, অদ্ভুতুড়ে অতিপ্রাকৃতিক চরিত্র ‘ফ্রাঙ্ক’ এর আগমন। ফ্রাঙ্ক ডনিকে সাবধান করে দিয়ে যায় কয়েক হপ্তা পরেই চেনা জানা দুনিয়ার শেষ এগিয়ে আসছে – অর্থাৎ কেয়ামত। যারা মুভি দেখেননি, এখানেই পড়া শেষ করুন। তবে যদি দেখতে চান, অবশ্যই ডিরেক্টরস কাট ভার্সনটা দেখতে হবে।


**স্পয়লার অ্যালার্ট **

রবার্টা স্প্যারোর The Philosophy of Time Travel গল্পের জট ছাড়াতে সবচেয়ে বড় সহায়ক। কাহিনীটা এমন – ডনির পৃথিবীর অল্টারনেট ইউনিভার্স সৃষ্টি হয় যাকে ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্স বলে রুপায়িত করা হয়েছে। টাইম ট্রাভেলার ফ্রাঙ্ক এসে ডনিকে বলে যায় কয়েক হপ্তা পরেই চেনা জানা প্রথিবীর ধ্বংস এগিয়ে আসছে। পরবর্তীতে ডনি জানতে পারে, ইউনিভার্স রক্ষার দায়িত্ব তার হাতেই সোপর্দ করা হয়েছে। এইতো? থিওরী-১ ধরি, ফ্রাঙ্ক আসলে ডার্কোর কল্পনা মাত্র। নিজের বাস্তবতার সাথে পেরে না উঠে উদ্ভট এক কাল্পনিক সত্ত্বা তৈরী করেছে যার সময় ভ্রমন করার ক্ষমতা আছে। বস্তুত ফিলোসফি অফ টাইম ট্রাভেল অনুযায়ী ক্ষমতাটা ডার্কোর নিজেরই, সে ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্সের “লিভিং রিসিভার” বলে।

The Living Reciever

“Philosophy of Time Travel, Chapter Six -
The Living Receiver is often tormented by terrifying dreams, visions and auditory hallucinations during his time within the Tangent Universe.”
একারণেই স্কুলের পানির পাইপ ফাটিয়ে দেয় গ্রেচেন এর সাথে পরিচিত হবার জন্য, জিম কানিংহ্যামের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় “কিডি পর্ণ ডাঞ্জেওন” ফাঁস করেদিতে, বাবা-মা এর বেডরুমে পিস্তল খুজে নেয় মুভির শেষে বাস্তব ফ্রাঙ্ককে গুলি করতে। এ সবই ডার্কো “লিভিংরিসিভার” হওয়ার কারণে আগে থেকে জানতো, যা অবচেতনে ফ্রাঙ্ক নামক দৈত্যকার দাঁতাল খরগোশ রুপে তৈরী হয়ে ডার্কোর হ্যালুসিনেশনে এসেছে (কেন ফ্রাঙ্কই এলো এটা শেষের দিকে বলা হবে)। এখন, আমরা কখনওই জানতে পারি না ঠিক কীভাবে ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্সের “লিভিং রিসিভার” বাছাই করা হয়। তবে ডনির চরিত্র লক্ষণীয় – সবার থেকে আলাদা এক কিশোর যে জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায় সমূহের একটা; বয়ঃসন্ধিপার করছে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ ব্যপক থাকা সত্ত্বেও আপাতদৃষ্টিতে মেয়েরা তার দিকে খুব একটা খেয়াল করে না। সুপারহিরো মনোভাব, সেভ দ্য ওয়ার্ল্ড টাইপের, সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাওয়া পারসোনালিটি ডার্কোর। সে সবার মাঝেই থাকতে চায় সবার থেকে আলাদা হয়ে, একবাক্যে অ্যাটেনশন সিকার। হয়ত একারণেই তাকে বেছে নেয়া হয়েছিলো।
আমরা আরো জানি না ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্স সৃষ্টির প্রকৃত কারণ। একটা ব্যপার মাথায় রাখতে হবে, জেটইঞ্জিন ধসে পড়ায় কিন্তু ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্স তৈরী হয়নি বরং সেটা ছিলো আর্টিফ্যাক্ট মাত্র– ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্স যে সৃষ্টি হয়েছে তার ইঙ্গিত।

The Artifact And the living

“Philosophy of Time Travel, Chapter 4 - Artifacts provide the first sign that a Tangent Universe has occurred.”
এর কিছু সময় আগে ফ্রাঙ্ককে প্রথম দেখা যায় এবং পৃথিবীর ধ্বংসের ডেডলাইন দেয় সে। ধরে নেয়া যায় ঘুমন্ত অবস্থায় ডার্কোকে ডাকার মুহুর্ত আগে ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্সের সৃষ্টি হয়েছিলো। ব্যপার হচ্ছে ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্স খুবই নড়বড়ে এবং কয়েকহপ্তার মধ্যে অরিজিনাল ইউনিভার্সের সাথে সংঘর্ষে ব্লাক হোল তৈরী করবে যা দুটো ইউনিভার্সকেই ধ্বংস করবে, যদি না আর্টিফ্যাক্ট অরিজিনাল ইউনিভার্সে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং কাজটা লিভিং রিসিভারকেই করতে হবে। এখানে ম্যানিপুলেটেড ডেডদের কাজ লিভিং রিসিভারকে সঠিক পথে ধাবিত করা।
লিভিং রিসিভারের ক্ষমতা বলে ডার্কো পোর্টাল বানায় (Philosophy of Time Travel, Chapter 6: The Living Receiver is often blessed with a Fourth Dimensional Powers. These include increased strength, telekinesis, mind control, and the ability to conjure fire and water).
এবং শেষের দিকে আমরা দেখতে পাই ডার্কো জেট ইঞ্জিনটাকে পোর্টালের ভিতর দিয়ে প্রাইমারী ইউনিভার্সে পাঠাচ্ছে। অর্থাৎ, ডার্কোর কাজ শেষ। এই থিওরী মোটামুটি ওকে।

থিওরি- ২ আরেকটা থিওরীও বিবেচনা করা যায়, সেখানে প্রায় সবকিছু একরকম শুধু ফ্রাঙ্ক ডার্কোরকল্পনা নয়। ফ্রাঙ্কের অস্তিত্ব আছে। ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্সের শেষদিকে ফ্রাঙ্ক মারা যায় এবং ম্যানিপুলেটেড ডেড’এ পরিণত হয়। ফিলোসফি অফ টাইম ট্রাভেল অনুযায়ী ম্যানিপুলেটেড ডেড ফ্রাঙ্ক ডার্কোকে পরামর্শ দিতে টাইম ট্রাভেল করে ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্সের শুরুতে চলে আসে এবং প্রতিটা ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিয়ে দিয়ে ডার্কোকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। এই থিওরী বেশ প্রমিজিং হলেও এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। গ্রেচেনও তবে ম্যানিপুলেটেড ডেড, অথচ ম্যানিপুলেটেড ডেড হিসেবে গ্রেচেনের কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই সে ডার্কোর রোমান্টিকাল ইন্টারেস্ট হলেও। কেন?


দুটো থিওরীতেই একটা ব্যপার আমার কাছে ঘোলাটে লেগেছে। “ম্যানিপুলেটেড ডেড”দের মধ্য হতে কে “লিভিং রিসিভার”এর প্রধান উপদেষ্টা হবে এটা কীভাবে বাছাই করা হয়? এ ব্যপারে একটা ব্যাখ্যা প্রস্তাব করা যেতে পারে। আমরা জানি বাস্তবে ফ্রাঙ্ক এলিজাবেথের বয়ফ্রেন্ড। ডার্কো একারণে ফ্রাঙ্ককে প্রথম থেকেই কিছুটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। আবার যেহেতু ডার্কো গ্রেচেনের প্রতি ইমোশনালি দুর্বল, সেহেতু লিভিং রিসিভার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় “চোজেন ম্যানিপুলেটেড ডেড” যেন লিভিং রিসিভারের মনোযোগ বিক্ষিপ্ত না করে - সেকারণে গ্রেচেনকে না বেছে নিয়ে ফ্রাঙ্ককে নেয়া হয়।

যাই হোক, ট্যাঞ্জেন্টইউনিভার্স হতে সবাই অরিজিনালে ফিরে গেলো। ফিলোসফি অফ টাইম ট্রাভেল অনুযায়ী বেশিরভাগ মানুষই মনে করতে পারবে না ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্সে অতিবাহিত সময়টুকু। এইটা একটা ব্যপার নিশ্চিত করে। পুরো সময়টা ডার্কোর ইমাজিনেশন নয় বরং সময়ের মাঝে আটকে যাওয়া কয়েকটা দিন। অনেকে মনে করে সম্পূর্ণ মুভিটা ডার্কোর স্বপ্ন মাত্র, এভাবে ভাবলে পুরো মুভিটাই ধোয়াশা মাত্র, ফিলোসফি অফ টাইম ট্রাভেল এই থিওরীকে সরাসরি নাকচ করে।
ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্সের সময়কাল সবাই যাপিত করেছে কিন্তু বেশিরভাগেরই মনে নেই, অনেকের কাছে স্রেফ দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়েছে অরিজিনাল ইউনিভার্সে ফেরত আসার পর। ব্যপারটা যেহেতু বাস্তব, স্বপ্নের থিওরি ধোপে টেকে না।

পুরো মুভিতেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে ফেলা হয়েছে। আমরা জানি ডার্কো অ্যাগনস্টিক। মুভিতে ট্যাঞ্জেন্ট ইউনিভার্সের সৃষ্টির কারণ, লিভিং রিসিভার বাছাই, ম্যানিপুলেটেড ডেডদের মধ্যে প্রধান গাইড বাছাই ইত্যাদি বিষয়ের কোন কারণ নেই। তবে ম্যানিপুলেটেড লিভিং, ডার্কোর সাইক্রিয়াটিস্ট ড. লিলিয়ান থারম্যান ডার্কোকে ঈশ্বরের অস্তিত্বের দিকে ঠেলে দেয়। এর প্রতিফলন দেখতে পাই মুভির এক্কেবারে শেষে...যখন ডার্কো আশাবাদ ব্যক্ত করে তার মৃত্যুর পর হয়ত তার প্রশ্ন গুলোর উত্তর পাবে সে। এই প্রসংগে আলোচনা আরো লম্বা করা যায়।

*




0 Comments 697 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024